আমার শৈশব || My Childhood
শৈশব প্রত্যেকের জীবনের মধুর একটি সময়। শৈশব জীবনের দিনগুলি ছিল দুরন্তপনা, দুষ্টুমি আর সারাদিন ছোটাছুটি করে দৌড়ে বেড়ানোর এক অন্যতম মুহূর্ত। আমার শৈশব যেন আজও আমাকে ডাকে আর বলে আয়-ফিরে আয়।
আমার শৈশব || My Childhood
শিবগঞ্জ,বগুড়া
শৈশব প্রত্যেকের জীবনের মধুর একটি সময়। শৈশব জীবনের দিনগুলি ছিল দুরন্তপনা, দুষ্টুমি আর সারাদিন ছোটাছুটি করে দৌড়ে বেড়ানোর এক অন্যতম মুহূর্ত। আমার শৈশব যেন আজও আমাকে ডাকে আর বলে আয়-ফিরে আয়।
সত্যিই আজও বার বার ফিরে যেতে মন চায় ফেলে আসা সেই শৈশবের দিনগুলিতে। মনে পড়ে অবাধে ঘোরা ফেরা আর খেলে বেড়ানো সেই সব দিনগুলির কথা। আপনিও হয়তবা শৈশব শব্দটি পড়েই স্মৃতির পাতায় হাতড়াতে শুরু করেছেন ফেলে আসা সোনালি দিনগুলোকে।
আমাদের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের দোপাড়া গ্রামে। আমাদের গ্রামটি উপজেলার মধ্যে সব চেয়ে বড় একটি গ্রাম। প্রায় ৫টি পাড়া মিলে এই গ্রামটি। সকল পেশাজীবী মানুষ এখানে শান্তিতে বসবাস করে। নেই কোন ঝগড়া, নেই হানাহানি। সকলেই শান্তি প্রিয়।
এখনো যদি সময় পাওয়া যায় তখন বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে অনেক সময় বেরিয়ে আসে সেই পুরাতন দিনগুলোর স্মৃতি মাখা দৃশ্য। চোখের সামনে চলে আসে প্রায় ১৭/১৮ বছর পূর্বের স্মৃতি। মনে পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে শিক্ষকদের বকুনি, আবার অনেকে বলেন সব চেয়ে রাগী শিক্ষকের পিটুনির কথাও।সবাই যেন কোথায় হারিয়ে যাই।
একদিন সকাল নয়টার দিকে পাশের বাড়ির ময়লা পানির পুকুরে কয়েকজন বন্ধু মিলে গোসল করতে ছিলাম। ওদিকে আবার স্কুল খোলা। দাদী খুঁজতে খুঁজতে সেই পাশের বাড়ির পুকুরে লাঠি হাতে চলে এসেছে। কি আর করা। তাড়াতাড়ি গোসল বন্ধ করে বাড়ি আসলাম। গোসল করলে শরীর পরিষ্কার হয়, আর আমাদের গোসলে শরীরে ময়লার স্তর জমে গেছে। কোন রকমে পরিষ্কার হয়ে স্কুলে দৌড়। স্কুল আবার বাড়ির পাশেই ছিল। শিক্ষক তো তৈরি। একে তো দেরিতে পৌঁছলাম তার উপর শরীরে ময়লা। যাই হোক স্যারের দুটো বেত্রাঘাত খেয়ে ক্লাসে ঢোকার অনুমতি পেলাম।
আমাদের বিদ্যালয়ের নাম ছিল দোপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকল শিক্ষকই খুব ঠাণ্ডা মেজাজের। শুধু রোহুল নামে স্যার ছিল খুব কড়া। এমন কোন শিক্ষার্থী নাই স্যারের হাতে শাস্তি না পেয়েছে। আজও স্যারের কথা মনে পড়ে। হয়তোবা স্যারের সেই কড়া শাসনের কারণেই আজ এতো দূর এসেছি। আজ স্যার নেই। শুনেছি মৃত্যুর পূর্বে নাকি স্যারের মাথায় সমস্যা হয়েছিলো। পাগল হয়ে গেছিলো। আজ স্যার নেই। তার সেই কড়া শাসনের কথা ঠিক মনে পড়ে।
সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। অর্ধদিন স্কুল। খুব মজা। মাত্র তিনটি ক্লাস করতে হবে। তাই ছুটি। বারোটা বাজার সাথে সাথেই ছুটির ঘণ্টা বেজে গেল। বই নিয়ে আর বাড়ি যাব না। কয়েকজন বন্ধু মিলে নদীতে চলে গেলাম গোসলে। নদীর পানিতে টুই টুম্বর। নদীতে গোসল করতাম আবার অনেক সময় মাছও ধরতাম। কেনো স্কুল ছুটির পর বাড়ি আসি নাই। মায়ের কাছে বকা শুনতে হতো এ নিয়ে কতো।
বছরে দুটি বড় ছুটির আশায় থাকতাম। কখন গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময় আসবে। অনেকদিন স্কুলের বারান্দায় পা রাখতে হবে না। আর দূর্গাপুজার সময়ে। তখন শুধু খেলাধুলা নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় পার করতাম। পড়াশোনা শিকায় তুলা থাকতো। কিন্তু ছুটির পর যেদিন স্কুল খোলা হতো পূর্বে পড়া কিছুই মনে থাকতো না। কি পড়া বাড়িতে দেয়া ছিল। খেতে হতো শিক্ষকের কানমলা। রোহুল স্যার কানমলা দিতে দিতে লাল হয়ে যেত। কানের ময়লা একটু থাকতো না।
তবে গ্রীষ্মকালে স্কুলের সামনে বড় একটি জাম গাছ ছিল। তার নিচে হতো ক্লাস। সুযোগ পেলেই গাছে উঠা, জাম পেরে খাওয়া। আর ধরা পড়লেই শিক্ষকের পিটুনি। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সহপাঠীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া। একপর্যায়ে ঝগড়া করতে গিয়ে স্কুলের কাঠের ব্লাকবোর্ড ভেঙে ফেললাম। আবার বিচার শিক্ষকের কাঠগড়ায়। বিচারে আমার ৬০টি বেতের আঘাত আর যার সাথে ঝগড়া তাকে ২০টি। এবার সাজা আর কমানো সম্ভব হলো না। সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে। কখনো ভুলার নয়। শৈশব স্মৃতি আজও নিজেকে তাড়িয়ে বেড়ায়।
একদিন স্কুল ছুটির পর বিকেলে স্কুলের মাঠে কাঁঠাল গাছে পাখির বাসা ছিল। গাছে উঠে পাখির বাসা থেকে ডিম পেরে এনেছি। সেখান থেকে দুটি ডিম ভেঙে যায়। বাকি একটি ডিম আবার পাখির বাসায় রেখে আসি। সে দিন ছিল বুধবার। পরদিন স্কুলে আসার সাথে সাথেই প্রধান শিক্ষক জনাব বদির উদ্দিন স্যারের কাছে আমার সম্পর্কে বিচার। স্যার তো রেখে আগুন। পাখির ডিম ভেঙেছি। মনে হয় অনেক দিনের ঝাল ঢালবে। কি আর করা স্যার বিচার শুরু করলো। শেষে বিচারের রায় হলো আমাকে ২০টি বেতের বাড়ি আর ৪০ বার কান ধরে উঠবস করতে হবে। পরে শাস্তি কমিয়ে ১০ টি বেত্রাঘাত আর ২০ বার কান ধরে উঠবস করতে হবে।
সেদিন মনে হয়েছিল আর এই স্কুলে পড়বো না। স্যার শুধু অকারণে পেটায়। কিন্তু তা নয়, স্যার সেদিন ঠিক ছিল। ঠিক ছিলাম না আমি বা আমরা। আজও সেই স্মৃতি মাখা শৈশবের দিনগুলো মনে পড়ে। আর কখনো কি ফিরে আসবে। তা আর সম্ভব নয়। শুধুই স্মৃতি।
সূত্রঃ জনবার্তা
What's Your Reaction?






