ইউরিক এসিড কেন হয়
ইউরিক অ্যাসিড কমাবে যে তিন খাবার ইউরিক এসিডে নিষিদ্ধ খাবার ইউরিক এসিড কেন হয় ইউরিক এসিডের লক্ষন ইউরিক এসিড নরমাল রেঞ্জ ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ ইউরিক অ্যাসিড বারলে কি হয় ইউরিক এসিডের ডয়েট চার্ট ইউরিক অ্যাসিড কমানোর উপায়

ইউরিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন তা গাঁটে জমা হয়ে গেঁটে বাতের মতো বেদনাদায়ক সমস্যা তৈরি করতে পারে। ইউরিক অ্যাসিড রক্তে পাওয়া বর্জ্য পদার্থ। এটি উত্পাদিত হয় যখন শরীর প্রক্রিয়াকরণ করে এবং নামে পরিচিত রাসায়নিকগুলি ভেঙে দেয়। ইউরিক অ্যাসিড রক্তে দ্রবীভূত হয়, কিডনির মধ্য দিয়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে মিশে যায় এবং শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যদি ইউরিক অ্যাসিড শরীরে থেকে যায়, তবে এর ঘনত্ব হাইপারইউরিসেমিয়া নামক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবং অঙ্গগুলির ক্ষতি করার সম্ভাবনা রাখে। ইউরিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়, যখন পিউরিন নামক জৈব যৌগ ভেঙে যায়। পিউরিন কিছু খাবারে পাওয়া যায় এবং আমাদের কোষগুলিতেও তৈরি হয়।
ইউরিক এসিডের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ:
ইউরিক অ্যাসিড আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয় এবং কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন তা গাঁটে জমা হয়ে গেঁটে বাতের মতো বেদনাদায়ক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিডের কিছু সাধারণ লক্ষণ:
- গাঁটে বাত: তীব্র বেদনা, লালভাব, ফোলাভাব এবং গাঁটে জ্বালা।
- কিডনি পাথর: শারীরিক বেদনা, প্রস্রাবে রক্ত, এবং বমি বমি ভাব।
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ: ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবে দুর্গন্ধ তৈরি করতে পারে।
- ক্লান্তি: ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রা ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করতে পারে।
- মাথাব্যথা: কিছু লোক ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রার সাথে মাথাব্যথা অনুভব করে।
- স্থায়ী বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাব এবং বমি ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চ মাত্রার লক্ষণ হতে পারে।
- জয়েন্টে ব্যথা এবং শক্ততা: ইউরিক অ্যাসিড জয়েন্টে জমা হয়ে ব্যথা এবং শক্ততা তৈরি করতে পারে।
- পেশীতে ব্যথা: ইউরিক অ্যাসিড পেশীতে ব্যথা এবং টান অনুভব করতে পারে।
উল্লেখ্য: উপরোক্ত লক্ষণগুলি অন্য স্বাস্থ্য সমস্যারও লক্ষণ হতে পারে। তাই, এই লক্ষণগুলি অনুভব করলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ।
উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নির্ণয়ের পদ্ধতি:
রক্ত পরীক্ষা:
- রক্ত পরীক্ষা হল উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড নির্ণয়ের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি।
- এই পরীক্ষায় রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।
- রক্তের ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা 7.0 mg/dL (পুরুষদের জন্য) এবং 5.7 mg/dL (মহিলাদের জন্য)।
প্রস্রাব পরীক্ষা:
- 24 ঘন্টার প্রস্রাব পরীক্ষা করা হয় ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য।
- এই পরীক্ষায় 24 ঘন্টার সময় ধরে প্রস্রাব সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।
- প্রস্রাবে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা 250-750 mg/day (পুরুষদের জন্য) এবং 150-600 mg/day (মহিলাদের জন্য)।
অন্যান্য পরীক্ষা:
- কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার আল্ট্রাসাউন্ড বা CT স্ক্যানের মাধ্যমে কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে পারেন।
- জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তার জয়েন্টের তরল পরীক্ষাও করতে পারেন।
পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা |
পুরুষদের |
নারী |
সাধারণ |
2.5-7 মিগ্রা/ডিএল |
1.5-6 মিগ্রা/ডিএল |
ঊর্ধ্বতন |
> 7 মিগ্রা/ডিএল |
> 6 মিগ্রা/ডিএল |
নিম্ন |
<2 মিলিগ্রাম / ডিএল |
<1.5 মিলিগ্রাম / ডিএল |
ইউরিক এসিডের ঘরোয়া চিকিৎসা:
খাদ্যাভ্যাস:
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান: পানি ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
- ফল এবং শাকসবজি: ফল এবং শাকসবজিতে ভিটামিন, খনিজ, এবং ফাইবার থাকে যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- চর্বিহীন প্রোটিন: চর্বিহীন প্রোটিন, যেমন মাছ, মুরগির মাংস, এবং ডাল, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে না।
- লো-ফ্যাট ডেয়ারি: লো-ফ্যাট ডেয়ারি, যেমন দুধ, দই, এবং পনির, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ওটস, বাদাম, এবং বীজ, ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
পরিহার্য খাবার:
- লাল মাংস: লাল মাংসে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- অফাল: অফালেও পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
- সীফুড: কিছু সীফুড, যেমন চিংড়ি, স্কুইড, এবং ঝিনুক, পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
- মদ্যপান: মদ্যপান ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- ফলকূল: ফলকূলে ফ্রুক্টোজের পরিমাণ বেশি থাকে যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- চিনিযুক্ত পানীয়: চিনিযুক্ত পানীয় ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
জীবনধারা:
- ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রেস ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
কিছু ঘরোয়া প্রতিকার:
- চেরি: চেরিতে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- আদা: আদায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গাঁটেবাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- লেবু: লেবুতে ভিটামিন সি থাকে যা ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
ইউরিক অ্যাসিডের কারণ
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমা হতে পারে, যদিও সঠিক কারণ স্পষ্ট নয়। কিছু কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে যা ইউরিক অ্যাসিড জমাতে অবদান রাখে, যেমন খাদ্য এবং পরিবেশগত কারণ। এই ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
- উচ্চ্ রক্তচাপ
- ডায়াবেটিস
- বিপাকীয় সিন্ড্রোম
- Diuretics
- অতিরিক্ত মদ খাওয়া
- কিছু ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ
উল্লেখ্য: এই তথ্য কেবলমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। কোন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
What's Your Reaction?






