কবে থেকে শুরু হয়েছে পিএসসির প্রশ্নফাঁস!
‘তাহসানের আম্মা জিনাতুন নেসা ২০০২-২০০৭ সাল পর্যন্ত পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন। আর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেছে ২০১২ থেকে, মানে গত একযুগ বা ১২ বছর।

আদালতে ছয় আসামির জবানবন্দি, কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ছয় আসামির জবানবন্দি গ্রহণের পর তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা হলেন অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।
এই দিন মোট ১৭ আসামিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ছয় আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
অন্যদিকে, পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবিরসহ ১১ জনকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক তাহমিনা হক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
প্রশ্নফাঁস বিতর্ক: পিএসসি চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া
বিসিএস এবং অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা নিয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের ঘটনা যে একেবারে হয়নি, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে পিএসসি থেকে প্রশ্নফাঁস করা অত্যন্ত কঠিন।
তিনি জানান, ‘লটারিতে কোন সেট আসবে তা কেউ জানে না, ফলে প্রশ্নফাঁস করা অত্যন্ত কঠিন। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানোর পুরো প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপন রাখা হয়।’ পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেদিন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, সেদিন সকালে লটারির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র নির্বাচন করা হয়। এতে প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেই বললেই চলে।’
বিসিএস প্রশ্নফাঁস: দীর্ঘদিনের অভিযোগ
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডারের প্রায় ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-২৪ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস হয়েছে। চ্যানেল-২৪ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদক আব্দুল্লাহ আল ইমরান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, ৩৩তম বিসিএস থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রায় ৩০টি ক্যাডার-নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং এতে জড়িত পিএসসির বড় কর্মকর্তারা।
তাহসান ও তার মায়ের পাশে প্রিন্স মাহমুদ
তাহসান ও তার মায়ের বিরুদ্ধে ছড়ানো তথ্যকে মিথ্যা দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার প্রিন্স মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘তাহসানের মা জিনাতুন নেসা পিএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালে কোনো প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। তাহসান ও তার মা-কে নিয়ে ছড়ানো খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাহসান
বিসিএসের প্রশ্নফাঁস বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা তাহসান ও তার মা। তাহসান ২৪তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই সময় তার মা পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, তাহসান কি তার মায়ের সাহায্যে প্রশ্নফাঁসের সুবিধা নিয়েছিলেন? তবে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
বিসিএস প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় পিএসসি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। জনগণের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে পরিচিত পিএসসি’র এমন কর্মকাণ্ড বেকার তরুণ-তরুণীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
What's Your Reaction?






