কোটা আন্দোলন ২০২৪ - কি? কেন? কিভাবে?
কোটা কি? কোটা কাকে বলে? কোটা বলতে কি বুঝায়? উত্তরঃ কোটা হল নির্দিষ্ট সংখ্যক পদ বা সুযোগ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা। বাংলাদেশে, সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটা প্রথা প্রচলিত।
বিশ্বব্যাপী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তবে ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, যার ফলে সরকার কোটা প্রথা বাতিল করতে বাধ্য হয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় পুনরায় আন্দোলন শুরু হয়েছে।
কোটা নিয়ে বিতর্ক নিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কোনো বিতর্কের বিষয় নয়। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কতটুকু কোটা প্রয়োজন, তা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে। তবে, যৌক্তিকভাবে কোটা পুনর্বিন্যাস করা না হলে বারবার আন্দোলন হবে। আন্দোলনকারীরা কোটা সংস্কার চান এবং বলেন, কোটা স্থায়ী হতে পারে না; চার-পাঁচ বছর পরপর কোটা সংস্কার করা উচিত। এটি মেধার মূল্যায়নে অর্ধেকের কম হওয়া উচিত, ৫০ শতাংশের বেশি সংবিধানসম্মত নয়। তবে আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করাও ঠিক নয়।
কোটা ব্যবস্থা শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা চালু করেন। ১৯৭৬ সালে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয় ৩০ শতাংশ, এবং নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত থাকে। ১৯৮৫ সালে কোটা পুনর্গঠন করে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশে উন্নীত করা হয় এবং উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিন্যাসের ইতিহাসে বিভিন্ন সময় অসঙ্গতিপূর্ণ পরিসংখ্যান ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কোটার আওতায় প্রার্থী না থাকলেও শূন্যপদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং অনেকবার অমুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নারী কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং জেলা কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ৫ জুন ২০২৪ হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। এরপর সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।
আন্দোলনকারীরা নারী, প্রতিবন্ধী এবং অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেন যে বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন, সেক্ষেত্রে আন্দোলন করা ঠিক নয়।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, কোটা সংস্কার হতে পারে, তবে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করা উচিত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা প্রয়োজন, তবে মেধাবীরা যাতে চাকরি পায় তা নিশ্চিত করাও জরুরি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানাতে কোটা দেওয়া হচ্ছে, তবে মেধাবীদের মূল্যায়নও গুরুত্বপূর্ণ।
কোটা কি? কোটা কাকে বলে? কোটা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ কোটা হল নির্দিষ্ট সংখ্যক পদ বা সুযোগ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা। বাংলাদেশে, সরকারি চাকরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কোটা প্রথা প্রচলিত।
কিছু সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন স্লোগান (২০২৩-২০২৪):
কোটা প্রথার কবর দে, বাংলাদেশ সোনার করে তোল,
মেধাবিদের অধিকার, কোটা বাতিলের দাবী,
এক দফা দাবি, কোটা বাতিল, সংস্কার,
ন্যায়বিচার চাই, কোটা নয়,
আমাদের চাকরি, আমাদের মেধা,
কোটা বাতিল, সুযোগ সকলের,
What's Your Reaction?