গাইনুরা গাছ - ঐশ্বরিক গাছ
গাইনুরা গাছকে কেউ কেউ বলেন 'ঐশ্বরিক গাছ। নার্সারি কর্মী ও হকারদের কল্যাণে এ দেশে রোগের লোকজ চিকিৎসায় গাছটি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডায়াবেটিস, বাতব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, কিডনী, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাইপারটেনশন এমনকি ক্যানসার রোগের উপশম করে এই গাছ।

গাইনুরা গাছকে কেউ কেউ বলেন 'ঐশ্বরিক গাছ। এ দেশে রোগের চিকিৎসায় ব্যাবহার হয়। গাছটি ব্যাপকভাবে বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডায়াবেটিস, বাতব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, কিডনী, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাইপারটেনশন এমনকি ক্যানসার রোগের উপশম করে এই গাছ। ইংরেজিতে গাছটিকে বলা হয় Longevity spinach বা leaves of life. কেননা, এ গাছের পাতা পালংশাকের মতো স্যুপে ও সালাদে খেলে দীর্ঘজীবন লাভ হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে গাইনুরা তার বিস্ময়কর ক্ষমতার গুণে এসব অর্থবোধক নাম অর্জন করেছে। ভগাইনুরা বন-জঙ্গলে জন্মালেও এখন এ গাছের চাষ হচ্ছে । এর কচি পাতা মাংস ও চিংড়ির সঙ্গে ভেজিটেবল স্যুপ রান্না করতে ব্যবহৃত হচ্ছে । অনেক আফ্রিকাবাসী প্রতিদিন গাইনুরা খেয়ে অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্ত থাকে ।
উদ্ভিদতাত্বিক বর্ননাঃ গাইনোরা এ্যাস্টারেসি পরিবারের ভেষজ গাছ। এ গাছের বেশ কয়েকটি প্রজাতির আছে। আমাদের দেশে দু প্রজাতির গাইনুরা গাছের দেখা মেলে nepalensis ও Gynura pseudochina. প্রথম প্রজাতির গাছ পরিচিত নুরাচিনা নামে।
গাইনুরার ভেষজগুণঃ গাইনুরা এক বিস্ময়কর গাছ যার ভেষজ মূল্য ওঃ অপরিসীম । একে শুধু শুধুই বলা হয়নি আয়ুবৃদ্ধির শাক বা পাতা । এ পগাছ যেন জীবনের এক অফুরন্ত সঞ্জীবন শক্তি, পৃথিবীতেই যেন এক হা স্বর্গীয় গাছ। মালয়েশিয়ায় এর পাতা কীচা খাওয়া হয়। সেদেশে এ নি গাছের নাম সামবাং নাইয়া যার অর্থ আয়ুবর্ধক,থাইল্যান্ডে গাইনুরা পাতা রান্না করে খাওয়া হয়। বিভিন্ন রন দেশে গাইনুরা বিশেষ বিশেষ রোগ সারানোয় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। যেমন ইন্দোনেশিয়ায় গাইনুরা ব্যবহৃত হয় কিডনীর রোগ সারাতে, ভিয়েতনামে জ্বর সারাতে , থাইল্যান্ডে বাত ও ভাইরাস জনিত রোগ সারাতে, বাংলাদেশে ডায়াবেটিস সারাতে। গাইনুরার মধ্যে ফ্লাভিনয়েডস ও গ্লাইকোসাইডের মতো বায়োএক্টিভ যৌগ থাকায় গাইনুরা এসব উষধিগুণ অর্জন করেছে । এই গাছের মধ্যে রয়েছে এমাইনো এসিড, ক্যারোটিনয়েড, আ্যালকালয়েড ও বহু রকমের এসেনসিয়ার অয়েল যা রোগ উপশমে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ বিগত কয়েক দশ বিশ্বে ডায়াবেটিকস এক সাধারণ রোগ হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। সত্যি কথা বলতে কি, দেহে ইনসুলিনের অভাব হলে ডায়াবেটিস রোগ হয়। গাইনুরা রক্তে চিনির পরিমাণ কমায় গাইনুরার পাতায় এমন একটি বায়োআ্যাকক্টিভ উপাদান আছে যা ত্র গাইনুরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়৷ বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিস । কেননা এর পাতার হাইপোগ্লাইসেমিক ক্রিয়া আছে।
রক্তচাপ কমায়ঃ কয়েক দশক আগে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, গাইনুরা হাইপারটেনশন কমাতে সাহায্য করে। এ গাছের মধ্যে এমন একটি উপাদান আছে যা রক্ত সংবহনতন্ত্রের পেশীতে ক্যালসিয়াম ইনফ্লাক্স তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে রক্তচাপ কমে যায় । এ ছাড়া গাইনুরা রক্তে নাইট্রিক অসক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা রক্ত চলাচল বাধাহীন ও সহজ করে দেয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের কারণে ওষুধ খেতে খেতে শ্রান্ত হয়ে পড়েছেন তারা গাইনুরার চিকিৎসা দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
হার্প নামক ভাইরাস রোগ প্রতিরোধ করেঃ হার্প একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ যে রোগে আক্রান্ত হলে মুখের চারপাশে ফুসঁকু-ড়ির মতো দেখা দেয়, ঠাণ্ডা লাগে ও স্বর হয়। দেহের মধ্যে স্বল্প হলেও সুপ্ত অবস্থায় থাকে যা সুযোগ পেলেই সংক্রমণ ঘটায় ন গাইনুরা এসব ভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। গবেষণায় গাইনুরা প্রোকামবেনসের এন্টি-হার্পেটিক ক্রিয়ার অনেক প্রমাণ মিলেছে ।
চাষাবাদঃ গাইনুরার অধিক ভেষজঙগুণ থাকলেও কোনো কোনো দেশে তা শাক বা পাতাজাতীয় সবজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ এ দেশে গাইনুরা ছিল এক অপরিচিত গাছ । বছর দুয়েক হলো গাছটির উপকারিতার কথা জানায় তা সুপরিচিত হয়ে উঠেছে। অনেকেই তাই চারা কীভাবে হবে, কীভাবে চাষ করা যাবে, আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গাইনুরা বনে ও বেলে মাটিতে ভালো অন্যে, তবে যত্ন নিয়ে চাষ করলে টবেও অনেক ফলন পাওয়া যায়। বেলে থেকে দো-আঁশ যে কোনো মাটিতে, রোদ কিংবা ছায়া জায়গায় গাইনুরার চাষ করা যেতে পারে। গরম আবহাওয়ায় গাছ অনেক বছর বাচে ও সেসব গাছ থেকে পাতা তোলা যায়। গাছের লতানো স্বভাব থাকায় তা বছরের মধ্যেই লতিয়ে জমি ভরে ফেলে । কাণ্ড বা শাখা কেটে কলম করে সহজেই চারা তৈরি করা যায়। যেসব কাণ্ডে কোনো শিকড় গজায়নি সেসব কাণ্ডের ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা টুকরো কেটে ১ থেকে ২টি গিঁট বালি বা বেলে গজায় । কাটার সময় সেসব কাণ্ডের গোড়ার দিকের পাতাগুলো সরিয়ে ফেলতে হবে । এতে কলম তাড়াতাড়ি বেঁচে উঠবে ।
What's Your Reaction?






