গয়াল বন্যপ্রানী নাকি গৃহপালিত?

গয়াল (বৈজ্ঞানিক নাম: Bos frontalis) বন্য গরুর একটি প্রজাতি। ভারতে এরা মিথুন নামে পরিচিত। এরা চিটাগং বাইসন নামেও পরিচিত।

Jan 8, 2024 - 18:58
Jan 8, 2024 - 20:00
 1  125
গয়াল বন্যপ্রানী নাকি গৃহপালিত?

গয়াল শব্দটির সাথে অনেকে পরিচিত আবার অনেকে পরিচিত না কারণ  গয়াল সচরাচর বাংলাদেশের সব জায়গায় দেখা যায় না। এটি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশি দেখা যায়, তবে এটি বন্য প্রাণী নাকি গৃহপালিত প্রাণী  এই নিয়ে অনেক মতভেদ আছে।  অনেকে মনে করে এটি বিলুপ্তপ্রায় বন্য গরু  “গৌর (Bos gaurus) বা বনগরু”  বংশধর  বা এর সংমিশ্রনে তৈরি এক সংকর জাতের গরু ।

কিন্তু এই গৌর এর সাথে গয়ালের কিছু পার্থাক্য আছে। গৌরের শিং মাঝের দিকে  অনেকটা চাঁদের মত বাঁকা, গয়ালের শিং দুই পাশে ছড়ানো, সামান্য ভেতরমুখী বাঁকানো এবং  শিং এর গোড়া অত্যন্ত মোটা। গয়াল পোষ মানলেও গৌর পোষ মানে না। বন্য গয়াল দিয়ে কুরবানী হবেনা।

গয়াল প্রায় আমাদের গৃহপালিত প্রাণী গরুর মতোই দেখতে। এ জন্য এদের বনগরু বলা হয়। বিরাট আকৃতির এই প্রাণীটির ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে । উচ্চতা দুই-তিন মিটার। গায়ের রং কালো। অপ্রাপ্তবয়স্ক গয়ালের রং সামান্য বাদামি। পূর্ণবয়স্ক গয়ালের রং সামান্য লালচে হয়ে থাকে। এদের হাঁটুর নিচ থেকে ক্ষুর পর্যন্ত সাদা লোমে আবৃত থাকে।

 

বুনো গয়াল দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের নেতৃত্বে থাকে একটি বড় ও শক্তিশালী ষাঁড়। সাধারণত, ১০-১১ মাস গর্ভধারণের পর স্ত্রী গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। গয়াল বাঁচে ১৫-১৬ বছর।

 

এরা তৃণভোজী। গহিন বনের যেখানে ছোট ছোট ঝোপের কচিপাতা ও ডালপালা আছে তেমন জায়গা গয়ালের বেশ পছন্দ। শক্ত ও কর্কশ ঘাস খাওয়ায় এদের দাঁত দ্রুত ক্ষয় হয়। এই ক্ষয় পূরণে এদের ক্ষার ও লবণযুক্ত মাটি খেতে হয়। অন্ত্রের পোকা কমানোর জন্যও এরা লবণ খায়। গয়ালের এই অভ্যাসের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে লবণের টোপ ফেলে গয়াল ধরা হয়।

 

বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও চীনে গয়াল দেখতে পাওয়া যায়। চীনের ইউনান প্রদেশের দুলং ও নিজিয়াঙ নদীর উপত্যকা ও সংলগ্ন পাহাড়ী এলাকায় গয়াল দেখা যায়। সেখানে এরা দুলং গরু নামে পরিচিত।বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাবলাখালী, সাজেক ভ্যালি ও মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন পাহাড়ি বনে গয়ালের বিচরণ রয়েছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে গয়ালের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপিত হলেও অব্যবস্থাপনা এবং পৃষ্ঠপোষকতা, কর্মচারী সংকট ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে প্রকল্পটি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে সফলভাবে গয়ালের কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এখানে পূর্ণবয়স্ক তিনটি পুরুষ গয়াল ও একটি স্ত্রী গয়াল রয়েছে। অতিরিক্ত মেদ এবং বয়সের কারণে এরা মিলিত হতে আগ্রহী নয়। ফলে এখানেও প্রজাতিটি বিলুপ্ত হতে চলেছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Mehedi I am Mehedi Hasan Siam-Professional Web Developer and IT Professional