চীনা লালগলা পাখি (Calliope tschebaiewi)
চীনা লালগলা লাজুক পাখি, ঘন ঝোপঝাড়, চা-বাগান, জলাভূমি এবং স্যাঁতসেঁতে ঘাসবনে একাকী বা জোড়ায় থাকে।

চীনা লালগলা পাখি (ইংরেজি নাম: Chinese Rubythroat, বৈজ্ঞানিক নাম: Calliope tschebaiewi) একটি ছোট আকারের শাখাচারী পাখি, যা ম্যাসসিক্যাপিডি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি লালগলা বা গুম্পিগোরা (সাইবেরিয়ান রুবিথ্রট) পাখির আত্মীয়, যা পশ্চিমবঙ্গে গুপিগলা নামে পরিচিত। একসময় চায়নিজ রুবিথ্রট ও হিমালয়ান রুবিথ্রট একই প্রজাতি (হোয়াইট টেইলড রুবিথ্রট) হিসেবে গণ্য হতো, কিন্তু বর্তমানে এরা আলাদা প্রজাতি। পশ্চিমবঙ্গে হোয়াইট টেইলড রুবিথ্রটকে পাহাড়ি গুপিগলা বলা হয়। সেই হিসেবে চায়নিজ রুবিথ্রটকে চীনা লালগলা বা গুপিগলা বলা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
চীনা লালগলা পাখির দৈর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ ও স্ত্রী পাখির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
পুরুষ পাখির বৈশিষ্ট্য:
- মাথাসহ দেহের উপরের অংশ জলপাই বাদামি রঙের।
- কপাল ও ভ্রু সাদা।
- সুস্পষ্ট কালো গোঁফরেখা রয়েছে যা লালগলা ও পাহাড়ি লালগলায় নেই।
- গলা ও চিবুকে চুনিলাল ডিম্বাকার ছোপ থাকে, যার চারপাশে বুক বরাবর চওড়া কালো পট্টি।
- পেট ও দেহতল সাদা।
- কালো লেজের গোড়া ও আগা সাদা।
স্ত্রী পাখির বৈশিষ্ট্য:
- গলা ও চিবুকে চুনিলাল ছোপ নেই, বরং তা সাদা।
- দেহের উপরের অংশ বাদামি।
- দেহতল ধূসরাভ।
- সরু সাদা ভ্রুরেখা।
- কালচে বাদামি লেজের আগা সাদা।
উভয়ের বৈশিষ্ট্য:
- চোখ কালচে বাদামি।
- চঞ্চু কালো।
- পা কালচে।
আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস:
চীনা লালগলা পাখি অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির। এরা বনপ্রান্ত, চা-বাগান, জলাভূমি ও স্যাঁতসেঁতে ঘাসবনে একাকী বা জোড়ায় লেজ উঁচিয়ে লাফিয়ে বেড়ায়। ভয় পেলে মুহূর্তেই ঝোপঝাড়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, শূককীট, শামুক, টিকটিকি ইত্যাদি। এরা 'চারক্', 'স্কিয়্যাপ', 'ইট-ইট' ইত্যাদি কর্কশ স্বরের সঙ্গে নানা ধরনের মিষ্টি শিস মিলিয়ে ডাকে।
প্রজননকাল:
মে থেকে আগস্ট মাস এদের প্রজননকাল। এ সময় এরা পাথরের মধ্যে বা ঝোপঝাড়ের নিচে বড়সড় গোলগাল বাসা বানায়। একেকটি পাখি চার থেকে ছয়টি ডিম পাড়ে, যেগুলি লালচে দাগ-ছোপসহ নীলচে-সবুজ রঙের হয়। স্ত্রী পাখি একাই ডিমে তা দেয় এবং ডিম ফোটে ১৪ দিনে। মা-বাবা উভয়েই ছানার যত্ন নেয় এবং ছানাগুলো প্রায় ১৬ দিনে উড়তে শেখে। এদের আয়ুষ্কাল চার বছরের বেশি।
পরিযান:
পাকিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত হিমালয়ান রেঞ্জ ও মধ্য চীনের পাখিটি শীতে অনিয়মিতভাবে সিলেট বিভাগের ঝোপঝাড়ে পরিযায়ী হয়।
What's Your Reaction?






