চোখ গ্যালো পাখি

এই ব্লগটি পাতি চোখ গ্যালো নামক মনোমুগ্ধকর পাখি সম্পর্কে। এতে তাদের বর্ণনা, আচরণ, বাসস্থান, প্রজনন, বিস্তৃতি, সংরক্ষণের অবস্থা এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মেটা তথ্য: শিরোনাম: পাতি চোখ গ্যালো: রহস্যময় কুকুভোদের রাজা! প্রকাশনার তারিখ: 2024-06-06 বিষয়: প্রকৃতি, পরিবেশ, বাংলাদেশ ভাষা: বাংলা স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ

Jun 6, 2024 - 16:20
Jun 9, 2024 - 13:03
 0  59
চোখ গ্যালো পাখি
File:Common Hawk Cuckoo (Hierococcyx varius) on ground at Narendrapur W IMG 4098

বাংলার আকাশে উড়ে বেড়ানোর সময় আপনি কি কখনো এক অদ্ভুত পাখিকে লক্ষ্য করেছেন যার চোখের চারপাশে সাদা পাতা থাকে? যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সম্ভবত পাতি চোখ গ্যালো (Hierococcyx varius) নামক মনোমুগ্ধকর পাখিটিকে দেখেছেন!


পাখিদের কলরবে বাংলার প্রতিটি ঋতু থাকে মুখরিত। বাংলায় বসন্তের আগমন ঘটে কোকিলের কুহূতানে। আবার বসন্ত শেষে গ্রীষ্মে সরব থাকে পাতি চোখগ্যালো পাখি। সে শুধু সারাদিন জোরালো গলায় গায় চোখ-গ্যালো, চোখ-গ্যালো। এদের সুরে রয়েছে চমৎকার তাল লয়। নিচুস্বর থেকেই ক্রমেই উঁচুস্বরে ডাকে এরা। পাখিটির ডাগর ডাগর দুটি চোখের অপলক সৌন্দর্যের কারণে বাংলায় ‘চোখ-গ্যালো’ শব্দটি যুক্ত হয়ে বাংলায় এর নাম হয়েছে ‘পাতি-চোখগ্যালো’।  


বিশ্বে আট প্রজাতির ‘হক-কুকু’ পাখি আছে। বাংলাদেশে হজসনি চোখ-গ্যালো, বড় চোখ-গ্যালো, পাতি চোখ-গ্যালো এই তিনটি প্রজাতি রয়েছে। একমাত্র ‘কমন হক-কুকু’ বা পাতি-চোখ-গ্যালো’ পাখিটিকেই বাংলাদেশের সর্বত্র নিয়মিত দেখা যায়। হিমালয় পর্বতের পাদদেশ থেকে বঙ্গোপসাগরের উপক‚ল পর্যন্ত এ পাখির বসবাস রয়েছে। যেখানেই বাস করুক না কেন সেখানকার আঞ্চলিক ভাষাতেই গান গায় চোখ-গ্যালো পাখি। পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতে গায়; পিউ-কাঁহা, পিউ-কাঁহা...স্বরে। হিন্দি ও উর্দু ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘প্রিয়া-কোথায়’। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘চোখ গেলো’ পাখি নিয়ে তাঁর বিখ্যাত গানে বলেছেন; ‘তোর চোখের জ্বালা বুঝি নিশি রাতে বুকে লাগে রে; চোখ-গেল ভুলে পিউ-কাঁহা পিউ-কাঁহা বলে তাই ডাকিস অনুরাগে রে।’ 


পাতি চোখ-গ্যালো লম্বা ডোরাওয়ালা লেজের মসৃণ ধূসর রঙের পাখি। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১০০ গ্রামের মতো। পিঠ ধূসর। দেহের উপরিভাগ ছাঁইরঙা ধূসর, নীচে সাদা ও দেহে আড়াআড়ি বাদামি রঙের দাগ থাকে। ডানার নিচের অংশ লালচে। চোখের তারা ও বলয় হলুদ বর্ণের। মুখ, পা, পায়ের পাতা ও নখর উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের। স্ত্রী ও পুরুষপাখি দেখতে একই রকম।


পাতি চোখ-গ্যালো সাধারণত বন, বাগান ও গ্রামে বিচরণ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে শুঁয়োপোকা, ফড়িং, পঙ্গপাল, উড়ন্ত উঁইপোকা ও মাকড়সা। কখনো এরা ছোট টিকটিকি ও নানান ফলমূল খেয়ে থাকে। দ্রæত ও ধীরে ধীরে ডানা মেলে শিকারী পাখির মত উড়ে বেড়ায়। মার্চ ও জুন মাস এদের প্রজনন ঋতু। এরা বাসা তৈরি করতে জানে না। স্ত্রী পাখি ছাতারে, বেনে বৌ এমন ধরনের পাখির বাসায় লুকিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম চকচকে নীল। 

এই রহস্যময় কুকুভো মাঝারি আকারের, 33-34 সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের। এদের পালক ধূসর রঙের, তবে বুক ও পেটের অংশ লালচে বাদামী। চোখের চারপাশে সাদা পাতার মতো চিহ্ন থাকে, যা এই পাখিকে অনন্য করে তোলে। একাকী বিচরণকারী পাতি চোখ গ্যালো সাধারণত একাকী বিচরণ করে, তবে প্রজনন ঋতুতে জোড়ায় দেখা যায়। এরা গাছের উঁচু ডালে বসতে পছন্দ করে এবং পতঙ্গ, ছোট সরীসৃপ ও ফল খেয়ে থাকে।

অন্যের বাসায় ডিম এই অদ্ভুত পাখিরা অন্য পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, যেমন সাতভায়লা, ফিঙ্গে, হলদে পাখি ইত্যাদি। ডিমগুলো নীল-সবুজ রঙের এবং এদের নিজস্ব কোনো বাসা তৈরির প্রবণতা নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তৃত পাতি চোখ গ্যালো দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ইত্যাদি।

বিপন্ন নয়, তবে সতর্কতা বর্তমানে পাতি চোখ গ্যালো বিপন্ন পাখি হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়নি। তবে, বাসস্থান হ্রাস ও কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের করণীয় পাতি চোখ গ্যালো রহস্যময় ও সুন্দর পাখি যারা আমাদের পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সংরক্ষণের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে এবং তাদের বাসস্থান রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Mehedi I am Mehedi Hasan Siam-Professional Web Developer and IT Professional