নির্বাচনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অভিযান
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শেষ দিকে ঘটে যাওয়া সহিংসতা এবং লুটপাটের পর, দেশে ছড়িয়ে পড়া অবৈধ অস্ত্র ও লুট করা অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী একযোগে অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট সরকার কর্তৃক বেসামরিক অস্ত্রের লাইসেন্স সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর এই অভিযান শুরু হচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্সকৃত ও লুট করা অস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পর যারা এ নির্দেশনা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযানের বিবরণ: আগামী ৪ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত ১২টা ১ মিনিট থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং আনসার সমন্বিতভাবে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করবে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হলো লুট করা অস্ত্র উদ্ধারে, অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা এবং যারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত এবং অস্ত্র অপব্যবহার করেছে তাদের গ্রেফতার করা। বিশেষ করে যারা সাম্প্রতিক আন্দোলনের সময় অস্ত্র প্রদর্শন করেছে এবং অস্ত্র-সম্পর্কিত মামলায় অভিযুক্ত তাদের গ্রেফতারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অভিযানের পটভূমি: সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী সহিংসতায় রূপ নেয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে হাজার হাজার অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। এই পরিস্থিতি জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের সময় ব্যবহৃত বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত, বৈধ অস্ত্রের অপব্যবহারকারী এবং অস্ত্র-সম্পর্কিত মামলার আসামিদের গ্রেফতার করতে। মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার এবং অন্যান্য অঞ্চলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হবে, যেখানে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হবে।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র এবং ভবিষ্যৎ কর্মসূচি: গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী ৩,৮৮০টি অস্ত্র, ২,৮৬,৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২,২০১টি টিয়ার গ্যাস শেল এবং ২,১৩৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার করেছে। তবে বিশেষ করে ঢাকার থানাগুলো থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা না দেওয়া অস্ত্রগুলোকে অবৈধ বলে গণ্য করা হবে এবং যারা এগুলো রাখবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমন্বিত অভিযানের কৌশল: সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, র্যাব এবং আনসারের সমন্বয়ে গঠিত এই বিশেষ দল একযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করবে। মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের কমিশনার এবং অন্যান্য এলাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হবে। এই দল মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পাচার রোধেও কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
চূড়ান্ত প্রস্তুতি: ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মঈনুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা এই অভিযানের কৌশল চূড়ান্ত করেন। সভায় লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
অভিযান শুরুর সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে, সমন্বিত বিশেষ দল আইন প্রয়োগ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যাতে অবৈধ অস্ত্র রাস্তা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা যায়।
What's Your Reaction?