প্রকৃতির কাব্যিক : তিলা মুনিয়া (Scaly-breasted munia)

Jun 28, 2024 - 16:39
 0  70
প্রকৃতির কাব্যিক : তিলা মুনিয়া (Scaly-breasted munia)
By Mahmadanesh - Own work, CC BY 4.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=149750208

বাংলাদেশের প্রকৃতির অলঙ্কার মুনিয়া পাখি, যা ভারতীয় উপমহাদেশে বিস্তৃত। এই পাখিটি চড়ুই পাখির তুলনায় একটু ছোট। দেশে যে পাঁচটি প্রজাতির মুনিয়া পাখি পাওয়া যায়, তার মধ্যে তিলা মুনিয়া অন্যতম। পেটের উপরের দিকে সাদা ফোঁটা থাকার কারণে এদের নাম তিলা মুনিয়া। ফসলের ক্ষেত, নলখাগড়ার বন, বাগান ইত্যাদি স্থানে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ায়। এরা এস্ট্রিলডিডাই (Estrildidae) পরিবারের লনচোরা (Lonchura) গণের অন্তর্গত এক প্রজাতির ছোট তৃণচর পাখি। তিলা মুনিয়া বা তিলে মুনিয়ার ইংরেজি নাম স্কেলি ব্রেস্টেড মুনিয়া ( Scaly-breasted munia) এবং বৈজ্ঞানিক নাম লনচোরা পুংচুলাটা (Lonchura punctulatea)

তিলা মুনিয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১১.৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ১৩.৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ জলপাই-বাদামি রঙের। মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত গাঢ় রঙের চিবুক এবং লালচে বাদামি মাথা ও কালো ঠোঁট থাকে। বুকের নিচ ও পেট কালচে-বাদামি রঙের, যেখানে সাদা ফোঁটা থাকে। মাছের আঁশের মতো বুকে সাদা কালো দাগ থাকে, যা এক ধ্রুপদি শিল্পকর্মের মতো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম হলেও পুরুষ পাখির থুতনি গাঢ়। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠ বাদামি, এবং বাচ্চাগুলোর শরীরের উপরিভাগ বাদামি ও নিচের অংশ লালচে-হলুদ, বুকে কোনো ফোঁটা থাকে না।

তিলা মুনিয়ার প্রিয় খাদ্য হলো ঘাসের বীজ, কাউন, ও ধান। এদের ঠোঁট খাটো ও মজবুত, যা দিয়ে সহজেই ধান ও অন্যান্য শস্যদানা খোসা ছাড়িয়ে নিতে পারে। এছাড়া রসালো ফল ও কীটপতঙ্গও খেয়ে থাকে। মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এদের প্রজননকাল। স্ত্রী মুনিয়া ৪ থেকে ৮টি সাদা ডিম পাড়ে, যা টিকটিকির ডিমের মতো হলেও খোসা বেশ পাতলা। স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রায় দু’সপ্তাহে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় এবং বাচ্চাদের লালন পালন করে।

গ্রীষ্মের শেষভাগ থেকে হেমন্তের প্রথম ভাগ পর্যন্ত তিলা মুনিয়া বাসা বাঁধে। খেজুর গাছের পাতার আড়ালে, লতাপাতার ঝোঁপে, বাবলা, ঝাউ, কেয়া, দেবদারু ইত্যাদি গাছে গোলাকৃতির বাসা বানায়। দুর্গম স্থানে বাসা বাঁধে এবং গোপন সুরঙ্গ পথ তৈরি করে। বাসা তৈরিতে ছন, খড়, কাশফুল, দুর্বাঘাস, ধানের পাতা, আখের পাতা, পাটের আঁশ, বাঁশপাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে।

পাখি পোষা মানুষের আদিম শখ। তিলা মুনিয়া পাখিদের আবদ্ধ অবস্থায় লালন-পালন ও বংশবৃদ্ধি করা যায়। একারণে তিলা মুনিয়া প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আইইউসিএন-এর তথ্যমতে, ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হলেও এই পাখিরা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। তাই অচিরেই এই সুন্দর পাখিটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যেতে পারে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Mehedi I am Mehedi Hasan Siam-Professional Web Developer and IT Professional