বড়াইবাড়ী যুদ্ধ বি.ডি.আর এর গৌরবময় ইতিহাস

Aug 19, 2024 - 22:11
 0  18
বড়াইবাড়ী যুদ্ধ বি.ডি.আর এর গৌরবময় ইতিহাস
UTPAL BARUAH/AFP via Getty Images

১৮ এপ্রিল ভোর রাতে বড়াইবাড়ি গ্রামে ভারতের আসাম রাজ্যের সীমান্তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গ্রামের কয়েকজন কৃষক যখন তাদের ধানক্ষেতে সেচের কাজ দেখতে যান, তারা দেখতে পান সেখানে বহু বিএসএফ সৈন্য অস্ত্র হাতে অবস্থান করছে। সৈন্যদের মধ্যে কয়েকজন এসে হিন্দি ভাষায় জানতে চান, বিডিআর ক্যাম্প কোথায়? এই প্রশ্ন শুনে গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন, তারা বিএসএফের সদস্য। 

তৎক্ষণাৎ, সাইফুল ইসলাম লাল নামের একজন গ্রামবাসী, যিনি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, খবরটি বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্পে পৌঁছে দেন। তখন ক্যাম্পে মাত্র আটজন বিডিআর সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সাইফুল ইসলাম লাল জানান, তিনি ক্যাম্পে গিয়ে বলেন যে বিএসএফ বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। এই খবর পেয়ে বিডিআর সদস্যরা অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুতি নেন। কিছুক্ষণ পর সাইফুল ইসলাম লাল বাইরে এসে দেখেন, পুকুরের অপর পাড়ে বিএসএফ সদস্যরা অবস্থান করছে। 

তিনি দ্রুত ক্যাম্পে ফিরে এসে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান এবং সাথে সাথেই ক্যাম্প থেকে গুলি বর্ষণ শুরু হয়। শত শত গুলির আওয়াজে বড়াইবাড়ি গ্রাম ও তার আশপাশ এলাকা কেঁপে ওঠে। গোলাগুলির মধ্যে গ্রামবাসীরা নিজেদের বাড়িঘর ফেলে পালাতে থাকে। 

এই ঘটনার সময়, স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৎকালীন সংসদ সদস্য রুহুল আমিন বিএসএফের হামলা প্রতিহত করতে স্থানীয় মানুষজনকে সংগঠিত করেন। তিনি বিডিআরের সহায়তায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১২ জন সদস্যকে একত্রিত করেন। তিনি বলেন, বিএসএফ বাংলাদেশের ভেতরে ঢোকার পর অনেক গ্রামবাসী পালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ফিরে এসে বিডিআরের সাথে মিলিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। 

বড়াইবাড়ি গ্রামে ভোর পাঁচটা থেকে সকাল এগারোটা পর্যন্ত তীব্র গোলাগুলি চলে। সংঘর্ষের পর কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবারো গুলিবর্ষণ শুরু হয়। এই ঘটনা ১৮ এপ্রিল সারাদিন এবং রাত ধরে চলতে থাকে এবং ১৯ এপ্রিল রাত পর্যন্ত থেমে থেমে চলে। সংঘর্ষের ফলে ১৬ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের দাবি, বিএসএফের আরো সৈন্য নিহত হলেও অনেক মৃতদেহ ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সাইফুল ইসলাম লাল উল্লেখ করেন, নিহত ১৬ বিএসএফ সৈন্যের মৃতদেহ বাংলাদেশে ধানক্ষেতে পাওয়া যায়।


রৌমারি আক্রমণ?

কুড়িগ্রামের সীমান্তে বিএসএফের আক্রমণের পটভূমি কিছুটা জটিল এবং এর একটি ইতিহাস রয়েছে। তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফজলুর রহমান ২০১২ সালে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন, এই ঘটনাটির সূচনা হয়েছিল সিলেটের পদুয়াতে। সেখানকার সীমান্ত এলাকায় ভারতের বিএসএফ একটি ক্যাম্প স্থাপন করে দীর্ঘদিন ধরে সেটি দখল করে রেখেছিল।

সিলেটের পদুয়াতে বিএসএফের ক্যাম্প নিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে তেমন কোনো উত্তেজনা না থাকলেও, ২০০১ সালের শুরুতে ভারতীয় বিএসএফ তাদের পাশের আরেকটি ক্যাম্পের সাথে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু করে, যা বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতর দিয়ে চলে। এই রাস্তা নির্মাণ নিয়ে বিডিআর আপত্তি জানালেও বিএসএফ তাদের কাজ চালিয়ে যায়।

এই পরিস্থিতিতে বিডিআর পদুয়াতে তাদের একটি অস্থায়ী অপারেশনাল ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। "আমরা পদুয়াতে গিয়ে সেখানে তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করি। বিএসএফ সেখানে ছয় রাউন্ড গুলি করে। পরে তারা প্রায় ৭০ জন সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। আমরা পদুয়া দখল করে নিই," বলেন ফজলুর রহমান।

পদুয়া ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে বড়াইবাড়ি বিডিআর ক্যাম্প দখল করার জন্য বিএসএফ বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow