বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ ২৮ সেপ্টেম্বর

জলাতঙ্ক রোগের ছবি, জলাতঙ্ক আক্রান্ত কুকুরের লক্ষণ, কোন কোন প্রাণী কামড়ালে জলাতঙ্ক হয়, জলাতঙ্ক কি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার কি কি, জলাতঙ্ক রোগের টিকা, জলাতঙ্ক রোগের ভয়াবহতা, বিড়ালের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ, জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার, জলাতঙ্ক রোগের কারণ, জলাতঙ্ক রোগের টিকার মেয়াদ, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিরোধ, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ, জলাতঙ্ক রোগ থেকে বাঁচতে কি কি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত, rabies vaccine, rabies,

Sep 28, 2024 - 15:23
 0  8
বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ ২৮ সেপ্টেম্বর
Rabbis Vaccine

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। প্রতি বছর এই দিনে জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। জলাতঙ্ক একটি প্রাণঘাতী রোগ, যা প্রাণীদের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে। বিশ্বে খুব কম কিছু দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ও যুক্তরাজ্য ছাড়া প্রায় সব দেশেই এ রোগে মানুষ ও প্রাণী মারা যায়। আমাদের দেশেও প্রতি বছর অনেকেই জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারায়। তবে সঠিক সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ রোগের প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

জলাতঙ্ক রোগটি প্রথমবারের মতো আবিষ্কার ও ভ্যাকসিনের উন্নয়ন করেন লুইস পাস্তুর। ২০০৭ সাল থেকে তার মৃত্যুদিনে (২৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো "জলাতঙ্ক রোগ ব্যবস্থাপনায় বাধা দূর করা," যা রেবিস নির্মূলের জন্য আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানায়। এই রোগটি ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণ নির্মূলের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

জলাতঙ্ক কী?

জলাতঙ্ক বা রেবিস হলো একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা সরাসরি স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণ করে এবং মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই ভাইরাসটি র্যা বডোভিরিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং মূলত কুকুর, বিড়াল, বাদুরসহ বিভিন্ন বন্য ও গৃহপালিত প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়। একটি আক্রান্ত প্রাণী যখন সুস্থ প্রাণীকে কামড়ায়, তখন ভাইরাসটি তার শরীরে প্রবেশ করে এবং নির্দিষ্ট সময় পরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে।

সংক্রমণের উপায়

জলাতঙ্ক মূলত রেবিড প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়, তবে এটি শুধুমাত্র কামড়ের মাধ্যমে নয়, ক্ষতস্থানে রেবিড প্রাণীর লালা লাগলেও এ রোগ হতে পারে। সংক্রামিত লালা যদি চোখ, নাক বা মুখের সংস্পর্শে আসে, তাহলেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ বাহক হলো কুকুর, তবে বিড়াল, শিয়াল, বেজি এবং বাদুড়ও এ রোগ ছড়াতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২১০০-২৩০০ মানুষ জলাতঙ্কে মারা যায়, এবং ৫-৬ হাজার গবাদিপশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

জলাতঙ্কের লক্ষণ

জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পেতে সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে। এ সময়কে বলা হয় রোগের সুপ্তিকাল। তবে সুপ্তিকাল ২ সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত হতে পারে। সুপ্তিকাল কতদিন স্থায়ী হবে তা নির্ভর করে ভাইরাসের পরিমাণ ও ক্ষতস্থানের নিকটবর্তী স্নায়ুর অবস্থানের উপর।

জলাতঙ্কে আক্রান্ত ব্যক্তির তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে অসংলগ্ন আচরণ শুরু হয়। সাধারণত তিন ধরনের ক্লিনিক্যাল লক্ষণ দেখা যায়:

  1. প্রোডারমাল ফেজ: প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে জ্বর, ক্লান্তি, মাথাব্যথা।
  2. এক্সাইটেটিভ ফেজ: রোগী উত্তেজিত হয়ে পড়তে পারে, পানির প্রতি অস্বাভাবিক ভয় (হাইড্রোফোবিয়া) সৃষ্টি হতে পারে।
  3. প্যারালাইটিক ফেজ: অবশেষে প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাত সৃষ্টি হয়, যা মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।

প্রতিরোধ ও প্রতিকার

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। রেবিড প্রাণীর কামড়ের সাথে সাথেই ক্ষতস্থান সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করে পোস্টবাইট রেবিস ভ্যাকসিন নিলে রোগটি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। একইসাথে প্রিবাইট ভ্যাকসিন দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারি উদ্যোগে জনসাধারণ ও গৃহপালিত প্রাণীর জন্য প্রিবাইট ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা উচিত। যেসব এলাকায় জলাতঙ্কের ঝুঁকি বেশি, সেখানে গৃহপালিত কুকুর, বিড়াল এবং বেওয়ারিশ কুকুরকে নিয়মিত ভ্যাকসিন দিতে হবে।

করণীয়

জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলে সবার আগে প্রয়োজন জনসচেতনতা। কুকুর ও বিড়ালের ভ্যাকসিনেশন, রেবিড প্রাণীর প্রতি সতর্কতা, এবং কামড়ের পরপরই যথাযথ চিকিৎসা নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো উচিত।

এ বছর বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবসে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন এবং আন্তঃবিভাগীয় সহযোগিতার মাধ্যমে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে জলাতঙ্কমুক্ত করতে পারব।

সবারই দায়িত্ব— সময়মতো ভ্যাকসিন নেওয়া, ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা, এবং জলাতঙ্ক বিষয়ে সচেতন থাকা।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Mehedi I am Mehedi Hasan Siam-Professional Web Developer and IT Professional