লেবাননে পেজার বিস্ফোরণ: কী ঘটেছিল এবং কেন ইসরাইলকে দায়ী করা হচ্ছে
লেবাননে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সদস্যদের যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত কয়েক হাজার পেজার একযোগে বিস্ফোরিত হয়েছে। এই ঘটনায় হিজবুল্লাহর এক প্রণেতার ছেলে এবং একটি কিশোরীসহ অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন, এবং আহত হয়েছেন আরও ২,৭৫০ জন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে, যা সিরিজ আকারে চলতে থাকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে। প্রচণ্ড এই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭৫০ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে ২০০ জনের অবস্থা গুরুতর। হতাহতদের রাজধানী বৈরুত এবং দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হিজবুল্লাহ এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে, তবে ইসরাইল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এ ঘটনায় হিজবুল্লাহর দুই যোদ্ধাসহ লেবাননের পার্লামেন্ট সদস্য আলী আম্মারের ছেলে মোহাম্মদ মাহদি আম্মার নিহত হয়েছেন। লেবাননে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোজতবা আমানিও আহত হয়েছেন।
পেজার কী এবং কেন ব্যবহার করা হয়?
পেজার, যা বিপার বা ব্লিপার নামেও পরিচিত, একটি বেতার যোগাযোগ যন্ত্র। এটি মূলত একটি ছোট পাঠ্য বার্তা প্রদর্শন করে, যা কেন্দ্রীয় অপারেটরের মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে পাঠানো হয়। মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার শুরুর আগে এটি প্রচলিত ছিল, তবে আজও অনেক দেশে বিশেষ করে হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে, কারণ এটি ট্র্যাক করা কঠিন।
কীভাবে বিস্ফোরণ ঘটল?
পেজার বিস্ফোরণ নিয়ে অনেকের ধারণা, এটি রেডিও নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঘটানো হয়েছে। বিস্ফোরণের জন্য পেজারগুলো হ্যাক করা হয়, যার ফলে সেগুলোতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কিছু সূত্র মতে, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া জানিয়েছে, যেসব পেজারে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেগুলো মাত্র পাঁচ মাস আগে লেবাননে এসেছে। এর আগে, যন্ত্রগুলো মোসাদের হাতে আসে এবং তারা এর ব্যাটারির মধ্যে উচ্চ বিস্ফোরক স্থাপন করে। পরবর্তীতে দূর থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ইসরাইলকে দায়ী করা হচ্ছে কেন?
বিস্ফোরণের পর হিজবুল্লাহ সরাসরি ইসরাইলকে দায়ী করে বলেছে, ‘ইসরাইল অবশ্যই এই পাপপূর্ণ আগ্রাসনের জন্য ন্যায্য শাস্তি পাবে।’ লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছেন। তবে ইসরাইল এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।
এই বিস্ফোরণ নিয়ে তদন্ত চলছে, এবং কীভাবে পেজারগুলো বিস্ফোরিত হলো, সে সম্পর্কে আরও তথ্য আসার অপেক্ষা করছে।
What's Your Reaction?