সুঁইচোরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উজ্জ্বল রত্ন

Sep 9, 2024 - 16:41
 0  16
সুঁইচোরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উজ্জ্বল রত্ন
সুঁইচোরা

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে নানা প্রজাতির পাখি প্রকৃতির সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দিয়েছে। এর মধ্যে সুঁইচোরা একটি বিশেষ সুন্দর এবং আকর্ষণীয় পাখি। উজ্জ্বল রঙের পালকের জন্য এটি পরিচিত। বিশ্বের প্রায় ২৭ প্রজাতির সুইচোরা থাকলেও বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ৪টি প্রজাতি: সবুজ-সুইচোরা (Merops orientalis), নীলদাড়ি-সুইচোরা (Merops leschenaulti), খয়রামাথা সুইচোরা (Merops philippinus), এবং নীল-লেজ সুইচোরা (Merops viridis)। এর মধ্যে ৩টি আবাসিক এবং ১টি গ্রীষ্মের পরিযায়ী পাখি।

এই পাখিগুলোর শরীরে সবুজ রঙের আধিক্য থাকে। ঠোঁট সরু ও সুঁচালো, এবং কিছু প্রজাতির লেজের মাঝের পালক সুঁইয়ের মতো সরু ও লম্বা। সুঁইচোরা শুধু শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত নয়; তাদের সামাজিক বৈশিষ্ট্যও উল্লেখযোগ্য। এরা সাধারণত দলবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে এবং একসঙ্গে উড়াল দেয়।

ইংরেজি নাম "Bee-eater" এর অর্থ মৌমাছি খেকো। মৌমাছি তাদের পছন্দের খাবার এবং পাখিটি মৌমাছি শিকার করতে বিশেষভাবে দক্ষ। পুরুষ ও মেয়ে পাখির মধ্যে রঙের পার্থক্য দেখা যায় তবে সাধারণত সবুজ রঙের আধিক্য সকল প্রজাতিতেই লক্ষ্যণীয়। চোখ দুটি উজ্জ্বল এবং ডানা লম্বাটে, পা তুলনামূলকভাবে ছোট।

সুঁইচোরা ঝোপঝাড় ও ঘন ডালপালাবিহীন মুক্ত অঞ্চল পছন্দ করে, যাতে তারা দ্রুত উড়ে পোকামাকড় শিকার করতে পারে। আকাশে দক্ষতার সাথে মাছি, উইপোকা, মৌমাছি, এবং ফড়িং শিকার করে। তাদের খাদ্যের প্রায় ১৫% মৌমাছি। খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া শৈল্পিক; উড়ন্ত মৌমাছিকে ধরে খাওয়ার আগে হুল চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলে।

জলপানেও তাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা জলপানের জন্য পানির ওপর উড়ে উড়ে ছোঁ মেরে জল গ্রহণ করে। প্রজনন সময় ফেব্রুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত। সাধারণত দলবেঁধে নদীর কিনারায়, খাড়া পাড়ে, বা মাটির ঢিবিতে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বাঁধে। বাসা তৈরি করার সময় বৃষ্টি বা বন্যার ক্ষতির সম্ভাবনা এড়ানোর জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতি নেয়।

ডিম পাড়ে পাঁচ থেকে ছয়টি এবং ডিম ফুটতে সময় লাগে তিন থেকে চার সপ্তাহ। ডিম ফোটার ২৪ থেকে ৩০ দিন পর বাচ্চারা বাসা ত্যাগ করে এবং প্রথম উড়াল দেয়।

বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং গবেষণা:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: Merops orientalis (সবুজ-সুইচোরা), Merops leschenaulti (নীলদাড়ি-সুইচোরা), Merops philippinus (খয়রামাথা সুইচোরা), Merops viridis (নীল-লেজ সুইচোরা)
  • প্রজনন: ফেব্রুয়ারী-জুন
  • আবাস: নদীর কিনারা, খাড়া পাড়, মাটির ঢিবি
  • খাদ্য: মৌমাছি, মাছি, উইপোকা, ফড়িং
  • বিশেষ বৈশিষ্ট্য: মৌমাছি শিকার, পানি পানের বিশেষ কৌশল

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী গবেষণায় সুঁইচোরা পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই পাখির প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংসের কারণে তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সুঁইচোরা পাখির সংরক্ষণে এবং তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow