সুন্দরবন দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারি
১৪ই ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই দিনের আছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা রয়েছে। এটি ২৩তম সুন্দরবন দিবস। সারা দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনে এই দিবসটি পালিত হলো।

১৪ই ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই দিনের আছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা রয়েছে। এটি ২৩তম সুন্দরবন দিবস। সারা দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনে এই দিবসটি পালিত হলো।
কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হলো। খুলনা প্রেসক্লাব ও সুন্দরবন একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুব হাসান। তিনি তার বক্তব্যে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে সকলকে সুন্দরবন সংরক্ষণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালেন।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল "প্লাস্টিক ও পলিথিনমুক্ত সুন্দরবনের জনপদ"। অনুষ্ঠানে সুন্দরবন রক্ষায় সক্রিয় সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, র্যালি, পোস্টার প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাইকেল র্যালি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সুন্দরবনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #সুন্দরবন_দিবস হ্যাশট্যাগে নানা আলোচনা ও প্রচারণা চালানো হয়েছে।
সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম মূল ভান্ডার। প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই অঞ্চলটি বাংলাদেশের প্রায় ১৪ শতাংশ ভূমি জুড়ে রয়েছে। এখানে ৫০০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছের বাসস্থান।
Image: ShutterStock/Sharif Uddin
সুন্দরবন: প্রজাতির অভয়ারণ্য, প্রকৃতির অলঙ্কার (Species in Sundarbans)
সুন্দরবনের মূল্য শুধু জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি প্রায় ৫০০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, যা বিশ্বের অন্য কোনো ম্যানগ্রোভ বনে পাওয়া যায় না। এই প্রাণীরা সুন্দরবনের জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আজকের সুন্দরবন দিবসে চলুন, এই অপূর্ব প্রজাতিদের কিছু গল্প শুনি:
বাঘের রাজ্য:
সুন্দরবনকে বলা হয় বাঘের রাজ্য। এখানে প্রায় ৩৫০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাস করে, যা বিশ্বের মোট বাঘের জনসংখ্যার প্রায় ১০%। এই বাঘগুলো সুন্দরবনের শীর্ষ শিকারী হিসেবে জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা করে।
জলের রাজা:
সুন্দরবনের জলজ প্রাণীদের মধ্যে গঙ্গা ও ইরাবতী ডলফিন অন্যতম আকর্ষণীয়। এই ডলফিনগুলো নদী ও মোহনায় বিচরণ করে এবং সুন্দরবনের জলজ পরিবেশের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে কাজ করে।
পাখির স্বর্গ:
সুন্দরবন প্রায় ৩৫০ প্রজাতির পাখির আবাস। এদের মধ্যে রয়েছে চমৎকার লাল বক, মেয়ে হরিণ, বড় শকুন, জলকাঁটা, ঝাঁটাপাখি ইত্যাদি। এই পাখিরা সুন্দরবনের জীবজগতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বীজ ছড়িয়ে দেওয়া, পোকামাকড় খাওয়া ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করে।
সরীসৃপের বিস্ময়:
সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরণের সরীসৃপ রয়েছে, যেমন কুমির, সাপ, কচ্ছপ ইত্যাদি। এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো এখানকার বিশাল আকারের ইস্টুয়ারিন কুমির, যা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় পাওয়া যায় না। এই সরীসৃপগুলো সুন্দরবনের জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মাছেরাশি:
সুন্দরবনের জলজ পরিবেশ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। এদের মধ্যে রয়েছে শিংমাছ, ইলিশ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি। এই মাছেরা সুন্দরবনের খাদ্যশৃंखলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং স্থানীয় মানুষের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করে।
কীটপতঙ্গের নৃত্য:
সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরণের কীটপতঙ্গ রয়েছে, যেমন প্রজাপতি, মৌমাছি, ঝিঁঝি ইত্যাদি। এই কীটপতঙ্গগুলো ফুলের পরাগায়ন, পোকামাকড় খাওয়া ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে সুন্দরবনের পরিবেশ সুস্থ রাখ
কিন্তু সুন্দরবনের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। অবৈধ কাঠামলা, পলিথিন দূষণ, জলোচ্ছ্বাস, মধু চুরি, বনাঞ্চল দখল ইত্যাদি কারণে এই অমূল্য সম্পদটি দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
What's Your Reaction?






