হল-মার্ক কেলেঙ্কারি: সম্পূর্ন ঘটনা
হলমার্ক-সোনালী ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারি হল একটি ব্যাপক ঋণ জালিয়াতি যা বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারি! বাংলাদেশের মানুষের মনে এ নামটি আনলেই জ্বালা জ্বলে ওঠে। ২০১২ সালের এই ঘটনাটি ছিল আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাসে এক কলঙ্ক। হল-মার্ক গ্রুপ অব কোম্পানি, সোনালী ব্যাংকের কাছ থেকে প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সেগুলো আত্মসাৎ করে ফেলে। কীভাবে এতো টাকা গায়েব হয়ে গেলো, কীভাবে ব্যাংকের লোকজন এতো বড় স্ক্যাম ধরতে পারলো না - এই প্রশ্নগুলো সেদিন থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে আমাদের সবার মনে।
ঘটনার প্রেক্ষাপটটা যদি দেখি, তাহলে দেখা যায়, ২০০৮-২০১২ সালের মধ্যে হল-মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে জাল নথি দিয়ে ঋণ নেয়। এমন অব্যক্তিগত ঋণের চালু আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব তো ব্যাংকেরই, কিন্তু সেখানেই দেখা দেয় গাফিলতি। এরপর ২০১২ সালে হল-মার্ক গ্রুপ ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধেই মামলা করে! এমন চালাকি আর কী হতে পারে? এই মামলাই আসলে সন্দেহ জাগানোর কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করে, এবং প্রমাণ পায় যে হল-মার্ক গ্রুপ ঋণের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
এরপর ২০১৪ সালে হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু ক্ষতি তো করা হয়ে গেছেই। এই কেলেঙ্কারির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। মানুষের ব্যাংকের প্রতি আস্থা নড়বড়ে যায়। সরকারের দল থেকেও তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। কীভাবে এমন কেলেঙ্কারি আর ঘটবে না, সেদিকে খেয়াল দিতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আরও জোরদার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ঋণ দেওয়ার আগে যথাযথ verification process মেনে চলাটা জরুরি। এই সঙ্গে দুর্নীতি দমন করে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
ঘটনার ক্রমবিকাশ:
- ২০০৮-২০১২: হল-মার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে জাল নথি ব্যবহার করে ঋণ নেয়।
- ২০১২: ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে হল-মার্ক গ্রুপ।
- ২০১৩: বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করে এবং হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
- ২০১৪: হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
- ২০১৯: হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কেলেঙ্কারির প্রভাব:
- বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব: এই কেলেঙ্কারির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
- ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থাচ্যুতি: এই ঘটনার ফলে জনগণের ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থাচ্যুতি ঘটে।
- সরকারের সমালোচনা: সরকারের তদন্তে গাফিলতি ও দুর্নীতির অভিযোগে সমালোচিত হয়।
এই কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা:
- ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা: ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
- ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন: ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা এবং জাল নথি ব্যবহার রোধ করা প্রয়োজন।
- দুর্নীতি দমন: দুর্নীতি দমন করে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সতর্কতা ও স্বচ্ছতার মধ্যেই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে পারে।
What's Your Reaction?