১৭৯ কিমি বেগে আসছে ঘূর্ণিঝড় বেরিল, বিস্তারিত পড়ুন

সাইক্লোন কোথায় সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় হওয়ার দুটি কারণ ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধের উপায় বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা 2024 ঘূর্ণিঝড় রচনা ঘূর্ণিঝড়ের ফলে কি কি ক্ষতি হয় ঘূর্ণিঝড় রেমাল ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রতিবেদন ঘূর্ণিঝড় বেরিল ঘূর্ণিঝড় বেরিল এর অবস্থান ঘূর্ণিঝড় বেরিল লাইভ ঘূর্ণিঝড় বেরিল আপডেট ঘূর্ণিঝড় বেরিল কি বাংলাদেশে আঘাত আনবে ঘূর্ণিঝড় বেরিল এর খবর

Jul 2, 2024 - 12:08
Jul 3, 2024 - 16:23
 0  35
১৭৯ কিমি বেগে আসছে ঘূর্ণিঝড় বেরিল, বিস্তারিত পড়ুন
হারিকেন বেরিল

আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্ট হারিকেন বেরিল দক্ষিণ-পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা একে "অত্যন্ত বিপজ্জনক" ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা ক্যাটাগরি ৪ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটি ঘণ্টায় ১৭৯ কিলোমিটার বেগে কয়েকটি দেশে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউএস ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) বরাতে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় সময় সোমবার (১ জুলাই) এই ঘূর্ণিঝড়টি ক্যারিবীয় দ্বীপগুলিতে প্রবল তাণ্ডব চালাতে পারে। রোববার রাত স্থানীয় সময় ৮টা পর্যন্ত বেরিল বার্বাডোসের প্রায় ২০০ মাইল পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ মাইল বেগে বাতাস বইছিল ও ১৮ মাইল প্রতি ঘণ্টায় এটি পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় বেরিল বার্বাডোস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রেনাডাইনস, গ্রেনাডা, মার্টিনিক, টোবাগো এবং ডোমিনিকাসহ গোটা ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে এসব দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ক্যাটাগরি ৪ পর্যায়ে পৌঁছানো এই ঘূর্ণিঝড়টি মাত্র ৪২ ঘণ্টার মধ্যে অত্যন্ত প্রবল আকার ধারণ করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, ‘বেরিল’ এখন পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরে রেকর্ড করা প্রথম এবং জুন মাসে রেকর্ড করা একমাত্র ক্যাটাগরি ৪ হারিকেন। এনএইচসি বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের কাছাকাছি বড় এবং ধ্বংসাত্মক ঢেউ নিয়ে আসতে পারে, যা ৬ থেকে ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করতে পারে।

ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের ডিরেক্টর মাইক ব্রেনান সিএনএনকে বলেন, আমরা দ্রুত তীব্রতা (ঝড়ের) বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিচ্ছি এবং বার্বাডোস ও উইন্ডওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জের মতো জায়গায় পৌঁছানোর আগে বেরিল একটি বড় হারিকেন হয়ে উঠবে। এছাড়া পূর্ব ও মধ্য ক্যারিবীয় অঞ্চলে অগ্রসর হওয়ার পরও এটি শক্তিশালী থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় বেরিল কি বাংলাদেশে আঘাত হানবে?

না, তবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বেরিল বার্বাডোস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, গ্রেনাডাইনস, গ্রেনাডা, মার্টিনিক, টোবাগো এবং ডোমিনিকাসহ গোটা ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে এসব দেশে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ক্যাটাগরি ৪ পর্যায়ে পৌঁছানো এই ঘূর্ণিঝড়টি মাত্র ৪২ ঘণ্টার মধ্যে অত্যন্ত প্রবল আকার ধারণ করেছে।

 

হারিকেন বা ঘূর্ণিঝড় কিভাবে সৃষ্টি হয়?

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে মানুষের কৌতূহল এবং উদ্বেগ সেই প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। যদিও এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, উপকূলে পৌঁছালে এটি বড় দুর্যোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ব্রিটানিকা ডটকম ওয়েবসাইটের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, যার বেশিরভাগ সাগরেই বিলীন হয়ে যায়। অল্প কিছু ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানে এবং বড় দুর্যোগ সৃষ্টি করে।

ঘূর্ণিঝড়ের গঠন এবং তীব্রতা:

ঘূর্ণিঝড়ের গঠন, চরিত্র, শক্তি এবং চাপসহ বিভিন্ন বিষয় এর তীব্রতা নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে। সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির মূল নিয়ামক। ১০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।  তাপমাত্রা পানির ৫০ মিটার নিচ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে বাষ্প তৈরির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই তাপমাত্রায় সমুদ্রের পানি বাষ্প হয়ে উপরে উঠতে শুরু করে, এবং স্যাঁতস্যাঁতে বাতাস তৈরি করে। এই দুইয়ের সমন্বয়ে তৈরি হয় মেঘ।

 

নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রক্রিয়া:

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যখন বাষ্প উপরে উঠতে শুরু করে, তখন বায়ুর চাপ কমে যায়। এই নিম্নচাপ এলাকা বায়ুশূণ্য হয়ে পড়লে, আশপাশ থেকে বায়ু সেই শূন্যতা পূরণের জন্য ছুটে আসে এবং একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়।

ঘূর্ণাবর্তের একটি কেন্দ্র তৈরি হয়, যেটিকে ঘূর্ণিঝড়ের চোখ বলা হয়। এই ঘূর্ণি উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে থাকে। চারপাশের বাতাসে যত মেঘ এবং আর্দ্রতা থাকে, সব এসে জড়ো হয়ে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে।

 

ঘূর্ণিঝড়ের আকার এবং শক্তি:

পানির তাপমাত্রা যত বেশি এবং নিম্নচাপ এলাকার চাপ যত কম, ততই সম্ভাবনা থাকে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির। ট্রপিক্যাল অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস সাধারণত একশ থেকে এক হাজার কিলোমিটার হয়ে থাকে, যা ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারের হয়। নন-ট্রপিক্যাল অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস এক হাজার থেকে চার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

 

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র এবং আশপাশের অঞ্চল:

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে থাকা বৃত্তাকার বলয়কে ‘চোখ বা ‘আই বলা হয়, আর এর চারপাশে থাকা শক্তিশালী বাতাসের বলয়কে ‘আই-ওয়াল বলা হয়। আই-ওয়াল বলয়ের পাশে সর্পিলাকার বিশাল কুণ্ডলিগুলোকে রেইনব্যান্ডস বা বৃষ্টির কুণ্ডলী বলা হয়, যা ঘূর্ণিঝড়ের সময় বৃষ্টির প্রধান কারণ।

 

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব

বাংলাদেশের বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি। কোন ঘূর্ণিঝড় শেষ পর্যন্ত উপকূলে আসবে সেটি নির্ভর করে ঘূর্ণির চরিত্রের উপর। উৎপত্তিগতভাবে সব ঘূর্ণিঝড় একই রকম হলেও, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের ‘সাইক্লোন বলা হয়, আটলান্টিক মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের ‘হারিকেন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এদের ‘টাইফুন বলা হয়। ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলো সাধারণত আটলান্টিকের হারিকেন বা প্রশান্ত মহাসাগরের টাইফুনের চেয়ে কিছুটা দুর্বল হয়।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট:

বাংলাদেশের সমুদ্র তীরের আকৃতি ফানেল বা চোঙের মতো হওয়ায় প্রায়ই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর শিকার হয় বাংলাদেশ এবং ভারতের উপকূল।

বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা 2024

 

উপসংহার

ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি, গঠন এবং প্রভাব নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ এবং উদ্বেগ সবসময়ই ছিল এবং থাকবে। এটি আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও, এর প্রভাব এবং ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আমাদের সজাগ থাকতে বাধ্য করে।

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Mehedi I am Mehedi Hasan Siam-Professional Web Developer and IT Professional