এক্সক্লুসিভ ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন হুমকি, ইইউ’র ডিজিটাল আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (DSA) আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই আইন আমেরিকানদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে। এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা আটলান্টিকের দুই পাড়ের সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।
 
                                    ঢাকা, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ - ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে এক নতুন সংঘাতের পথে হাঁটছে। সূত্রের খবর, তারা নাকি ইইউ’র নতুন ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (DSA) বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এই আইনটি আমেরিকানদের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এমন পদক্ষেপ সত্যি হলে, তা হবে এক নজিরবিহীন ঘটনা, যা আটলান্টিকের দুই পাড়ের সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তবে যদি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, তবে তা সম্ভবত ভিসা নিষেধাজ্ঞার আকারে আসবে। কোন কোন ইইউ বা সদস্য রাষ্ট্রর কর্মকর্তারা এর টার্গেট হবেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে গত সপ্তাহে এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুধু তাই নয়, ট্রাম্প সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ডিজিটাল কর আরোপকারী দেশগুলোকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি এই 'বৈষম্যমূলক' আইনগুলো প্রত্যাহার করা না হয়, তাহলে তিনি সেই দেশগুলোর পণ্যের ওপর 'উল্লেখযোগ্য অতিরিক্ত শুল্ক' বসাবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের 'অতি সুরক্ষিত প্রযুক্তি ও চিপস' রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দেবেন।
সাধারণত, বাণিজ্য অংশীদাররা একে অপরের অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়ে অভিযোগ করে থাকে, কিন্তু কোনো একটি আইনের জন্য সরাসরি সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাটা খুবই অস্বাভাবিক। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্ক এমনিতেই বেশ নাজুক। দুই পক্ষের মধ্যে শুল্ক নিয়ে উত্তেজনা, আলোচনা ব্যর্থ হওয়া, এবং মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ইউরোপের আচরণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
এর আগে রয়টার্স জানিয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন ইউরোপে তাদের কূটনীতিকদের নির্দেশ দিয়েছে DSA আইনের বিরুদ্ধে লবিং করার জন্য, যাতে আইনটি সংশোধন বা বাতিল করা যায়।
ইইউ’র ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট মূলত অনলাইন পরিবেশকে আরও নিরাপদ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে ঘৃণা বক্তব্য এবং শিশু যৌন নির্যাতনমূলক উপকরণের মতো অবৈধ বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু ওয়াশিংটন মনে করে, এই আইন বাকস্বাধীনতার ওপর 'অযাচিত' বিধিনিষেধ আরোপ করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কূটনীতিকদের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা যেন ইইউ সরকারগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে ডিএসএ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলোর ওপর এর আর্থিক চাপ সম্পর্কে জানান।
মে মাসে রুবিও হুমকি দিয়েছিলেন, যেসব বিদেশি কর্মকর্তা আমেরিকানদের বাকস্বাধীনতা 'সেন্সর' করবে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তাদের জন্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে কোনো নিশ্চিত তথ্য দেননি, তবে বলেছেন, তারা ইউরোপে 'ক্রমবর্ধমান সেন্সরশিপ' নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অন্যদিকে, ইইউ কমিশনের এক মুখপাত্র সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে আগে বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের 'সেন্সরশিপ' সংক্রান্ত অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "বাকস্বাধীনতা ইইউ’র একটি মৌলিক অধিকার, যা ডিএসএ’র মূল ভিত্তি। এই আইন অনলাইন মাধ্যমগুলোর জন্য অবৈধ বিষয়বস্তু মোকাবিলার নিয়ম তৈরি করে, একই সাথে অনলাইনে বাক ও তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করে।"
ট্রাম্প প্রশাসন সাধারণত গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রথাগত প্রচারণার পথ থেকে সরে এসে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি করার ওপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে। তবে তারা এমন কিছু বিশেষ কারণের পক্ষে কথা বলছে, যা ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যা তারা অনলাইনে রক্ষণশীল কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, যিনি ট্রাম্পের মিত্র এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিচার তদারকি করছিলেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, ইইউ জার্মানিতে ডানপন্থী এএফডি পার্টির মতো গ্রুপগুলোর বাকস্বাধীনতাকে 'সেন্সর' করছে। তবে ইইউ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইইউ’র অ্যান্টিট্রাস্ট ও প্রযুক্তি প্রধানরা গত মার্চে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছিলেন, এই নতুন প্রযুক্তি আইনটি ডিজিটাল বাজারগুলোকে উন্মুক্ত রাখার জন্য এবং এটি কোনোভাবেই মার্কিন কোম্পানিগুলোকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়নি। অন্যদিকে, মেটা প্ল্যাটফর্মসের মতো মার্কিন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো বলছে, ডিএসএ আসলে তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোকে সেন্সর করার শামিল।
এই পরিস্থিতি একদিকে যেমন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তেমনি দুই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককেও এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
What's Your Reaction?
 Like
        0
        Like
        0
     Dislike
        0
        Dislike
        0
     Love
        0
        Love
        0
     Funny
        0
        Funny
        0
     Angry
        0
        Angry
        0
     Sad
        0
        Sad
        0
     Wow
        0
        Wow
        0
     
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                            