চীনের বাজারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা, এনভিডিয়ার ফলাফলে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা

এনভিডিয়া, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এআই চিপ নির্মাতা, তাদের আসন্ন ত্রৈমাসিক আয়ের প্রতিবেদনে চীনের বাজারে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব তুলে ধরতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে রপ্তানি লাইসেন্স বাবদ বিক্রির ১৫% দেওয়ার চুক্তির পর, এবার চীনের পক্ষ থেকে চিপ কেনা কমানোর ইঙ্গিত এসেছে।

চীনের বাজারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা, এনভিডিয়ার ফলাফলে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
NVDIA: Pic Collected

চীনের বাজার থেকে এনভিডিয়ার ব্যবসায় যে ধাক্কাটা লেগেছে, তার প্রভাব এবার তাদের ত্রৈমাসিক ফলাফলে ভালোভাবে দেখা যাবে। এআই চিপ নির্মাতা হিসেবে সারা বিশ্বে নাম করলেও, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে পড়ে এনভিডিয়া এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বুধবার যখন এনভিডিয়া তাদের আয়ের রিপোর্ট প্রকাশ করবে, তখন বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে বিশেষ করে চীনের বাজারের দিকে।

ব্যাপারটা হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে এনভিডিয়া এক অদ্ভুত চুক্তিতে এসেছে। তারা চীনে চিপ বিক্রির লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মার্কিন সরকারকে সেই বিক্রির ১৫ শতাংশ দিতে রাজি হয়েছে। এই চুক্তির জন্য মার্কিন রাজনীতিতে দু'দলেরই সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে চীন আবার নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে এনভিডিয়ার চিপ কেনা থেকে বিরত থাকতে বলছে। এমনও খবর এসেছে, এনভিডিয়া নাকি তাদের কিছু সরবরাহকারীকে চীনের জন্য তৈরি বিশেষ H20 চিপের উৎপাদন বন্ধ করতে বলেছে। তবে এর মধ্যেই রয়টার্স জানিয়েছে, এনভিডিয়া নাকি চীনের জন্য আরও শক্তিশালী নতুন চিপ বানাচ্ছে।

এনভিডিয়াতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাফার টেঙ্গলার ইনভেস্টমেন্টসের সিনিয়র অ্যানালিস্ট জেমি মেয়ার্স বলেছেন, "আমাদের প্রথমে এই দুই সরকারের কাছ থেকে একটা পরিষ্কার বার্তা পেতে হবে। চীন কি আসলে এই চিপগুলো চায়? আর মার্কিন প্রশাসন কি তাদের এই চিপ বিক্রি করতে দেবে? আর যদি দেয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়াটা কেমন হবে?"

গত বছর এনভিডিয়ার মোট আয়ের ১৩ শতাংশই এসেছিল চীন থেকে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে, অর্থাৎ জুলাই পর্যন্ত, অনেক বিশ্লেষকই চীনের বাজার থেকে H20 চিপের আয়ের হিসেব করেননি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন আসতে দেরি হয়েছে, আর চীনের দিক থেকে এই বিষয়ে অনীহা দেখা যাচ্ছে। মে মাসে এনভিডিয়া জানিয়েছিল, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের জুলাই প্রান্তিকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বিক্রি কম হতে পারে। এর আগের তিন মাসেও তাদের ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছিল।

তবে সব মিলিয়ে, এআই চিপের বাজার কিন্তু দারুণ জমজমাট। মেটা আর মাইক্রোসফটের মতো বড় টেক কোম্পানিগুলো থেকেও এনভিডিয়ার চিপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এনভিডিয়া এবার দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রায় ৪৬.০২ বিলিয়ন ডলার আয়ের কথা জানাতে পারে, যা গত বছরের তুলনায় ৫৩.২ শতাংশ বেশি। যদিও আগের বছরগুলোর মতো তিন অঙ্কের প্রবৃদ্ধি এবার আর দেখা যাচ্ছে না।

এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং যদি চিপের চাহিদা নিয়ে কোনো ইতিবাচক মন্তব্য করেন, তাহলে সম্প্রতি কমে যাওয়া এআই খাতের অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারের দাম আবার বাড়তে পারে। চলতি বছরে এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম এক-তৃতীয়াংশের বেশি বেড়েছে, যা গত দুই বছরের তুলনায় কম হলেও অন্যান্য চিপ কোম্পানিগুলোর সূচক এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের চেয়ে এগিয়ে আছে।

এনভিডিয়া এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি। তৃতীয় প্রান্তিকের জন্য বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এনভিডিয়া প্রায় ৫২.৯৬ বিলিয়ন ডলার আয়ের পূর্বাভাস দেবে, যা গত বছরের চেয়ে ৫১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার চীন থেকে আসতে পারে বলে অনুমান করছেন পাইপার স্যান্ডলারের বিশ্লেষকরা।

তবে, মার্কিন সরকারের সাথে চুক্তির কারণে চীনে বিক্রি হওয়া চিপগুলোতে এনভিডিয়ার মোট মুনাফায় ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাব পড়তে পারে। বার্নস্টেইনের বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে এনভিডিয়ার সার্বিক মার্জিন এক পয়েন্ট কমে যেতে পারে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির মোট মার্জিন প্রায় ৪ পয়েন্ট কমে ৭২.১ শতাংশ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। আর অক্টোবরের প্রান্তিকে এটি আরও ২ পয়েন্ট কমে ৭৩.২ শতাংশে নামতে পারে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0