সীসার বিষকেও হার মানালো এক প্রজাতির টিকটিকি
বিজ্ঞানীরা কিউবান বাদামী অ্যানোল নামক এক প্রজাতির টিকটিকি আবিষ্কার করেছেন যারা নিজেদের রক্তে অবিশ্বাস্য উচ্চ মাত্রার সীসা সহ্য করতে পারে এবং এতে তাদের কোনো শারীরিক ক্ষতি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সে পাওয়া এই টিকটিকিগুলোর রক্তে সীসার পরিমাণ যেকোনো মেরুদণ্ডী প্রাণীর চেয়ে বেশি, যা মানুষের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত মাত্রার চেয়েও বহুগুণ বেশি।
 
                                    শহরের কোলাহল এবং দূষণের মাঝে প্রাণীরা যেভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়, তা বিজ্ঞানীদের জন্য বরাবরই এক বড় বিস্ময়ের বিষয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টুলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এমনই এক অবিশ্বাস্য অভিযোজনের উদাহরণ খুঁজে পেয়েছেন, যা জীববিজ্ঞানের ধারণাকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। তারা কিউবান বাদামী অ্যানোল (Anolis sagrei) নামের এক প্রজাতির টিকটিকির সন্ধান পেয়েছেন, যারা নিজেদের শরীরে সর্বোচ্চ পরিমাণে সীসা নিয়েও সম্পূর্ণ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউ অরলিন্স শহরে পাওয়া এই টিকটিকিগুলোর রক্তে সীসার গড় মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ৯৫৫ মাইক্রোগ্রাম। এটি এখন পর্যন্ত নথিভুক্ত যেকোনো মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের রেকর্ডটি ছিল নীলনদের কুমিরের, যার চেয়ে এই টিকটিকিদের রক্তের সীসার মাত্রা তিনগুণেরও বেশি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কুমিরের শরীরে সীসার বিষক্রিয়ায় দাঁত কালো হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা গেলেও এই অ্যানোলগুলো ছিল সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক।
এই মাত্রাটি কতটা মারাত্মক, তা মানুষের সঙ্গে তুলনা করলেই স্পষ্ট হয়। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তে সীসার মাত্রা ৪৫ মাইক্রোগ্রাম হলেই তা বিপজ্জনক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। শিশুদের জন্য কোনো মাত্রার সীসাই নিরাপদ নয়। সীসার বিষক্রিয়ায় মানুষের মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বৃদ্ধি থেমে যায়। অথচ, গবেষকরা একটি অ্যানোলের রক্তে ৩,১৯২ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি পেয়ে হতবাক হয়ে গেছেন।
গবেষকরা জানতে চেষ্টা করেছেন, কীভাবে এই টিকটিকিরা এমন মারাত্মক বিষাক্ত পরিস্থিতি মানিয়ে নিচ্ছে। জেনেটিক বিশ্লেষণে কিছু সম্ভাব্য কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। তাদের ধারণা, অ্যানোলদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন-বহনকারী অণুর উৎপাদন অনেক বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু সীসা কোষের অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা নষ্ট করে, তাই অতিরিক্ত অক্সিজেন-বাহক তৈরি করে তারা এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়। শারীরিক পরীক্ষাতেও এর প্রমাণ মিলেছে; ট্রেডমিল বা ব্যালেন্স বিমে তাদের গতি বা ভারসাম্যের ওপর সীসার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
গবেষক দলের প্রধান অ্যালেক্স গুন্ডারসন জানান, এই আবিষ্কারটি ছিল অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। স্থানীয় পাখির শরীরে সীসা পাওয়ার পর তারা কেবল কৌতূহলের বশেই এই টিকটিকিগুলো পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। এই গবেষণাটি শহুরে পরিবেশে প্রাণীদের অভিযোজন এবং বিষাক্ত পদার্থ সহনশীলতার বিষয়ে গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
What's Your Reaction?
 Like
        0
        Like
        0
     Dislike
        0
        Dislike
        0
     Love
        0
        Love
        0
     Funny
        0
        Funny
        0
     Angry
        0
        Angry
        0
     Sad
        0
        Sad
        0
     Wow
        0
        Wow
        0
     
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                            