অতিরিক্ত ডাল ও সবজি খাওয়া কি সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর

ডাল ও সবজি আমাদের দৈনন্দিন খাবারের অপরিহার্য অংশ হলেও অতিরিক্ত খেলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে। ডালে প্রোটিন, আয়রন ও ফোলেট থাকলেও অতিরিক্ত গ্রহণে গ্যাস, হজমের সমস্যা ও খনিজ শোষণে বাধা তৈরি হয়। একইভাবে সবজি ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর হলেও অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে পাথর, থাইরয়েডের সমস্যা ও হজমের জটিলতা দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত ডাল ও সবজি খাওয়া কি সত্যিই শরীরের জন্য ক্ষতিকর
ডাল ও সবজি

বাংলার খাবার মানেই ভাতের সঙ্গে ডাল আর সবজি—এ যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে অভ্যাসবশত খাবারের শুরুতে সবজি আর শেষে ডাল রাখেন। আমিষ, আঁশ, ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এই দুই খাবারকে সুষম আহারের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ধরা হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর বলেই অযথা বেশি খাওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনের বাইরে খেলে শরীরের ভেতর একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে নানা সমস্যার জন্ম দেয়।

ডালের উপকারিতা ও সমস্যা

ডাল হলো আমাদের দেশের সবচেয়ে সহজলভ্য উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস। মুগ, মসুর, ছোলা, মাসকলাই বা অড়হর—সব ডালেই রয়েছে আয়রন, ফোলেট, পটাশিয়াম ও অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো দরকারি উপাদান। প্রতিদিন এক থেকে দুই বাটি ডাল খেলে পেশির স্বাস্থ্য ভালো থাকে, শক্তি মেলে এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে বেশি খেলে তা হজমে জটিলতা তৈরি করে। কারণ, ডালে প্রচুর আঁশ ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে গ্যাস, পেট ফাঁপা বা বদহজম দেখা দিতে পারে। বিশেষত ডাল ভিজিয়ে না রান্না করলে সমস্যা বাড়ে। এছাড়া ছোলা জাতীয় ডালে ফাইটেটস ও লেকটিন নামক উপাদান থাকে, যা দেহে জিঙ্ক, আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ শোষণে বাধা দেয়। আবার কেবল ডালের ওপর নির্ভর করলে অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি তৈরি হয়, কারণ প্রাণিজ উৎস বাদ দিলে প্রোটিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

সবজির উপকারিতা ও সমস্যা

সবজি সাধারণত নির্দোষ খাবার হিসেবেই ধরা হয়। এতে ক্যালরির পরিমাণ কম, অথচ রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ। নিয়মিত সবজি খেলে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি কমে, শরীর থাকে সতেজ। তবে অতিরিক্ত খেলে উল্টো বিপদ হতে পারে। পালংশাক বা বিটের মতো শাকে উচ্চমাত্রায় অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।

অতিরিক্ত আঁশও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খুব বেশি ফাইবার গ্রহণ করলে ডায়রিয়া, পেটব্যথা কিংবা পুষ্টি শোষণে সমস্যা হয়। বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকলির মতো সবজিতে থাকে গয়ট্রোজেন, যা বেশি খেলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে। বিশেষত যাদের আগে থেকেই থাইরয়েড সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।

সঠিক উপায়

ডাল ও সবজি আমাদের খাদ্যতালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে পরিমাণের হিসাব রাখা জরুরি। প্রতিদিন এক থেকে দুই বাটি ডাল যথেষ্ট। একইভাবে সবজির ক্ষেত্রে দিনে তিন থেকে চার প্রকার খাওয়াই ভালো। সবুজ, লাল আর হলুদ রঙের সবজি একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে শরীর নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পায়, আবার হজমেও সুবিধা হয়।

রান্নার কৌশলেও খেয়াল রাখতে হয়। ডাল আগে ভিজিয়ে নিলে হজম সহজ হয় এবং পুষ্টি ভালোভাবে শোষিত হয়। সবজি হালকা ভাপে রান্না করলে এর ভিটামিন অটুট থাকে। অন্যদিকে অতিরিক্ত সেদ্ধ করলে পুষ্টি নষ্ট হয়।

ডাল বা সবজি কোনোটিই বাদ দেওয়া সমাধান নয়। বরং সঠিক পরিমাণে ও বৈচিত্র্য রেখে খাওয়াটাই স্বাস্থ্যকর। এক ধরনের খাবার বেশি খেলেই অন্য দরকারি পুষ্টি উপাদানগুলো বাদ পড়ে যায়। তাই ভারসাম্য বজায় রেখে, রান্নার সঠিক পদ্ধতি মেনে খেলে ডাল আর সবজিই হতে পারে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার সবচেয়ে বড় সহায়ক।

What's Your Reaction?

Like Like 1
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0