এক্সক্লুসিভ রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন দাবি করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়েছেন।

এক্সক্লুসিভ রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন দাবি করলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা
Chief Advisor Office of Bangladesh's interim government, Muhammad Yunus, speaks at an international conference in Cox's Bazar, Bangladesh on August 25, aimed at addressing the plight of Rohingya refugees [Bangladesh's Chief Advisor Office of Interim Government/AFP]

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের দাবিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কক্সবাজারে আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, বাংলাদেশ আর অতিরিক্ত চাপ নিতে পারছে না। বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে দেশটি, যা অর্থনীতি, পরিবেশ, সমাজ ও প্রশাসনে গুরুতর প্রভাব ফেলছে।

সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় ২৫ আগস্ট, ২০১৭ সালের গণহত্যার আট বছর পূর্তি উপলক্ষে। ওই বছর আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে আরও কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে আসে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই ঘটনাটিকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

Rohingya refugees take part in the ‘Genocide Remembrance Day’ rally to mark the anniversary of their mass exodus from Myanmar, in Cox’s Bazar, Bangladesh [Piyas Biswas/AFP]

Rohingya refugees take part in the ‘Genocide Remembrance Day’ rally to mark the anniversary of their mass exodus from Myanmar, in Cox’s Bazar, Bangladesh [Piyas Biswas/AFP]

অধ্যাপক ইউনুস অনুষ্ঠানে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে মিয়ানমারে সহিংসতা অবসান, জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি, আসিয়ান ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের একটি কার্যকর রোডম্যাপ তৈরি। তিনি বলেন, “তাদের নিজস্ব ভূমি ও ঘরে ফেরার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।”

ইউনুস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে এবং তাদের জাতিগত নিধনের নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চলমান উদ্যোগে নতুন গতি সঞ্চারের ওপর জোর দেন। তার মতে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে গণহত্যার সমাপ্তি ঘটবে না এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনও সম্ভব হবে না।

কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে এদিন হাজারো রোহিঙ্গা ‘গণহত্যা স্মরণ দিবস’ পালন করে ন্যায়বিচার ও প্রত্যাবর্তনের দাবিতে মিছিল করেছে। তাদের বার্তা স্পষ্ট— তারা নিজের ঘরে ফিরতে চায়। তবে মিয়ানমারের ভেতরে চলমান সংঘর্ষের কারণে পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সীমান্তের ওপারে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় এখনই প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেখা কঠিন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো অপরাধীকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি। ফোর্টিফাই রাইটসের সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্যাট্রিক ফংসাথর্ন বলেন, “এটি বিশ্বের বিবেকের ওপর গভীর কলঙ্ক। এখনো সময় আছে অন্যায়ের বিচার নিশ্চিত করার।” তিনি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর আহ্বান জানান।

এরই মধ্যে জাতিসংঘ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে আরেকটি বড় সম্মেলন আহ্বান করেছে। কিন্তু বাস্তবে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা এখনও ক্ষীণ। ২০২৪ সালের শুরু থেকে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যখন বিশ্বব্যাপী অর্থায়ন ক্রমশ কমছে। যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল স্থগিতের কারণে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাজেট ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে রাখাইনে বসবাসরত পরিবারগুলোর অর্ধেকেরও বেশি পর্যাপ্ত খাদ্য পাচ্ছে না।

শরণার্থী শিবিরে প্রতিদিন খাদ্যাভাব প্রকট আকার ধারণ করছে। বর্তমানে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার মাসে মাত্র প্রায় ১২ ডলারের খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।

অন্যদিকে, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলায় মিয়ানমারের গণহত্যার দায়িত্ব নির্ধারণের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে আবেদন করেন।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এই সংকটের টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। অধ্যাপক ইউনুস তাই আন্তর্জাতিক

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0