ঘাড়ব্যথায় অবহেলা করা উচিত নয়
আধুনিক জীবনের অস্বাস্থ্যকর ভঙ্গির কারণে ঘাড়ব্যথা অনেকের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণ যেমন পেশি ও লিগামেন্টে টান, ডিস্কের সমস্যা, বয়সজনিত পরিবর্তন ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে সৃষ্টি হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক অভ্যাস গ্রহণ করলে ঘাড়ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং জীবনের গুণগত মান উন্নত হয়।
 
                                    আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে শারীরিক ভঙ্গির অস্বাভাবিকতা বেড়ে গেছে, যার ফলে মেরুদণ্ডসহ শরীরের নানা অংশে ব্যথা দেখা দেয়। ঘাড়ব্যথা এসবের মধ্যে অন্যতম সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে যেসব পেশাজীবী দীর্ঘ সময় সামনে ঝুঁকে কাজ করেন বা যারা ঘাড়, কাঁধ ও মাথায় ভারী বস্ত্র বহন করেন, তাদের মধ্যে ঘাড়ব্যথার প্রবণতা বেশি।
ঘাড়ব্যথার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। হঠাৎ আঘাত লেগে পেশি ও লিগামেন্টে টান পড়া বা চাপ পড়া, সঠিক ভঙ্গিমায় বসতে না পারা, যার ফলে ঘাড়ের হাড়ের স্বাভাবিক বক্রতা হারানো, মেরুদণ্ডের ডিস্কে সমস্যা, ডিস্কের ওপর অতিরিক্ত চাপ বা স্থানচ্যুতি, নার্ভে চাপ পড়া, বাতজনিত সমস্যা, বয়সজনিত পরিবর্তন এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ ঘাড়ব্যথার কারণ হয়ে থাকে।
ঘাড়ব্যথার উপসর্গগুলো বিভিন্ন রকম হতে পারে। ঘাড়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে কাঁধ, বুকে, মাথার পেছনে, বাহু, কনুই ও হাতে। অনেক সময় সকালে বা রাতে ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, ঘুমানোর সময় কষ্ট, হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা, ঘাড় ঘোরাতে অসুবিধা হওয়া এবং ঘাড় একদিকে বাঁকা হয়ে যাওয়া দেখা যায়। ঘাড় থেকে হাতের আঙুল পর্যন্ত ঝিঝি বা অবশ ভাব অনুভূত হতে পারে, এমনকি হাত-পা দুর্বল হয়ে যাওয়া বা মাংসপেশি ক্ষীণ হওয়ার মতো লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘোরা বা ভারী ভাব অনুভূত হওয়াও সম্ভব।
যাদের জীবনের ধরন ঘাড়ব্যথার ঝুঁকি বাড়ায় তাদের মধ্যে অন্যতম তারা যারা সারাদিন ঘাড় নিচু করে কাজ করেন, যারা অতিরিক্ত সময় কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, যারা মাথায় বা কাঁধে ভারী বস্ত্র বহন করেন, যারা নিয়মিত দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করেন এবং যারা উচ্চ বালিশ ব্যবহার করেন।
ঘাড়ব্যথার সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সমস্যা নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত শারীরিক ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে হয়। ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। চিকিৎসায় সাধারণত বেদনানাশক ও পেশি শিথিলকারী ওষুধ ব্যবহৃত হয়, তবে ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ নেওয়া উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারভেনশনাল থেরাপি প্রয়োগ করা হয়, এবং মারাত্মক অবস্থায় সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে।
ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা এবং সুস্থ জীবনধারা পালন করা অপরিহার্য। বিছানায় শক্ত সমান পৃষ্ঠ, পাতলা তোশক ও মাঝারি উচ্চতার বালিশ ব্যবহার করা ভালো। প্রয়োজনে সার্ভাইক্যাল কনটোর পিলো ব্যবহার করতে পারেন। চেয়ারবাজারে বসার সময় ঘাড় সোজা রাখতে হবে, কম্পিউটার বা টিভি দেখার সময় চোখ মনিটরের স্তরে রাখা উচিত। প্রতিদিন কিছু সময় সূর্যের আলোতে থাকা এবং ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রয়োজনীয় খনিজসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ শরীরের মেরুদণ্ড ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।
ঘাড়ব্যথাকে ছোট করে না দেখে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সঠিক যত্ন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যার থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
What's Your Reaction?
 Like
        0
        Like
        0
     Dislike
        0
        Dislike
        0
     Love
        0
        Love
        0
     Funny
        0
        Funny
        0
     Angry
        0
        Angry
        0
     Sad
        0
        Sad
        0
     Wow
        0
        Wow
        0
     
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                                                                                                                                                     
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                             
                            