নিম্নমানের কোম্পানির খেসারত গুনছে বাপেক্স, ৪২ মিলিয়ন ডলার জরিমানার মুখে

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্স একটি বড় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে। সিঙ্গাপুরের একটি আন্তর্জাতিক সালিশি কেন্দ্র আজারবাইজানের একটি ড্রিলিং কোম্পানিকে প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য বাপেক্সকে নির্দেশ দিয়েছে।

নিম্নমানের কোম্পানির খেসারত গুনছে বাপেক্স, ৪২ মিলিয়ন ডলার জরিমানার মুখে
বাপেক্স

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস অনুসন্ধান সংস্থা বাপেক্স বর্তমানে একটি বড় আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (এসআইএসি) সম্প্রতি আজারবাইজানের ড্রিলিং কোম্পানি সোকার একিউএস এলএলসি-র পক্ষে রায় দিয়েছে। এই রায়ের ফলে বাপেক্সকে ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে, যদিও সোকারের দাবি ছিল ৭২ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে একটি কূপে বাপেক্সের মোট ব্যয় ৫৭ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।

জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেশে অদক্ষতা, দুর্বল নীতিমালা এবং দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তের ফল। আন্তর্জাতিকভাবে অভিজ্ঞ ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত কোম্পানিকে বাদ দিয়ে শুধু কম মূল্যে কাজ দেওয়ার মানসিকতার কারণেই এমনটা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. ফজলুল হক জানিয়েছেন, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দেওয়া হয় এবং নিম্নমানের কোনো কোম্পানি যাতে কাজ না পায়, সে জন্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়েরও একটি কমিটি এসব বিষয় তদারকি করে।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সিলেটের ১০ নম্বর কূপে একই ধরনের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোপ্যাক ১৯ মিলিয়ন ডলারে ৩,৩০০ মিটার গভীর পর্যন্ত খননের কাজ পেলেও মাত্র ২,৫৭৬ মিটার গভীরে ড্রিল পাইপ আটকে যায়। ফলে গ্যাসের বিশাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও তা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। এই ব্যর্থতার পরও সিনোপ্যাককে পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়। মজার ব্যাপার হলো, সেই একই সিনোপ্যাককে এখন ভোলায় আরও পাঁচটি কূপ খননের জন্য মনোনীত করা হচ্ছে, যেখানে ভূগর্ভস্থ চাপ সিলেটের চেয়েও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।

দেশে অতীতে শেভরন, হ্যালিবার্টন, স্লামবার্জার-এর মতো অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক কোম্পানি সফলভাবে কাজ করেছে। তা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যক্তির স্বার্থে কম মূল্যের দরদাতা নির্বাচন করে অনভিজ্ঞ কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন কমে ১,৭৬৭ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি নতুন কূপ খননের পরিকল্পনা করলেও তহবিলের অভাবে তা অনিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোলায় নতুন কূপ খননের আগে সেখানে পাইপলাইন স্থাপন করে গ্যাস গ্রিডে সংযোগ দেওয়া জরুরি। বর্তমানে পাইপলাইনের অভাবে ভোলায় ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৭০-৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কূপ খনন করলে বাপেক্সের ওপর আর্থিক চাপ আরও বাড়বে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0