জুলাই সনদকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পক্ষে বিএনপি
বিএনপি 'জুলাই সনদকে' সাংবিধানিক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। দলটির সর্বশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সনদে বিগত ১৫ বছরের আন্দোলন ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ অনুপস্থিত থাকায় নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
বিএনপি 'জুলাই সনদকে' সাংবিধানিক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই, ২০২৫) রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী। এরই মধ্যে সরকার জুলাই সনদের একটি খসড়া বিএনপি'সহ ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পাঠিয়েছে এবং আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই সনদটি চূড়ান্ত করতে চাইছে।
জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপির অসন্তোষ
বিএনপির বৈঠক সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করলে সনদে বেশ কিছু অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন নেতা। তাদের মূল অভিযোগ ছিল, সনদে বিগত ১৫ বছরে বিএনপির আন্দোলন, গুম-খুন ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ পুরোপুরি অনুপস্থিত।
নেতারা বৈঠকে বলেন, সনদটি মূলত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকেই গুরুত্ব দিয়েছে। অথচ শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির চার শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন এবং অনেকেই গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এই অভ্যুত্থান ঘটেছে—এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সনদে সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদান এবং শেখ হাসিনার ভূমিকা সম্পর্কেও কোনো উল্লেখ না থাকায় নেতাদের অভিযোগ, সনদটি একপেশেভাবে তৈরি করা হয়েছে।
অমীমাংসিত ইস্যু ও বিএনপির অবস্থান
বৈঠকে সংস্কার কমিশনের অধীনে থাকা কিছু অমীমাংসিত ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল সংসদের উচ্চকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি, নারী আসনে নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নিয়ম এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য স্থাপন।
বিএনপির পূর্বের অবস্থান অনুযায়ী, দলটি চায় উচ্চকক্ষ ও সংরক্ষিত নারী আসনের বণ্টন নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যার অনুপাতে হোক। তবে তারা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের বিরোধিতা করেছে, কারণ তাদের মতে এটি সংবিধান পরিপন্থী।
এই প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি সংসদের কাছে যেমন আছে, তেমনি জনগণের কাছেও আছে। কিন্তু কর্তৃত্ব না রেখে কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি চাপিয়ে দিলে কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভব নয়। সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের হাত-পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতে সমস্যার কারণ হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার রাত ৯টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
What's Your Reaction?
Like
0
Dislike
0
Love
0
Funny
0
Angry
0
Sad
0
Wow
0